spot_img

সেই শিক্ষকের ল্যাপটপে মিলেছে সংবেদনশীল অডিও ভিডিও

ছাত্রীকে যৌননির্যাতন ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠা রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকার রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে দায় স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে জব্দ করা ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনে মিলেছে কয়েকটি সংবেদনশীল অডিও ভিডিও। সেগুলো তিনি কি উদ্দেশ্যে সংরক্ষণে রেখেছিলেন, বøাকমেইল করে আর কাউকে ভিকটিম বানাতে চেয়েছিলেন কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে ওই শিক্ষক কতজন ছাত্রীকে কোন কোন জায়গায় নিয়ে শ্লীলতাহানি করেছেন। এদিকে শুধু স্কুল ও কোচিং সেন্টার নয় রাজধানীতে কোনো শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।


গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন্স) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ভিকটিম ছাত্রীর পরিবার গত ২৬ ফেব্রæয়ারি মামলা দায়ের করার পরের দিনই ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতের নির্দেশে দুইদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষক মুরাদ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, শিক্ষক মুরাদের অপকর্মে অভিভাবকরা যেমন শঙ্কিত, সারাদেশের শিক্ষক সমাজও লজ্জিত। ফলে আগামীতে যাতে আর কেউ কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়, সেজন্য শিক্ষক মুরাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশের যা যা করণীয় তা করা হবে। একইসঙ্গে বলতে চাই, রাজধানীতে কেউ শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেসব শিক্ষার্থী স্কুল-কোচিংয়ে যাচ্ছে তারা স্বাভাবিকভাবে যাবে, এক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি বদ্ধ পরিকর।
এ বিষয়ে ভিকারুননিসা স্কুলের দায়িত্ব অবহেলা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ব্যক্তির দায় কখনো প্রতিষ্ঠান নেয় না। প্রতিষ্ঠানটিতে আরো অনেকে চাকরি করেন। তারা নিশ্চিয় এমন আচরণ করছেন না। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের যে আচরণ করা দরকার তারা সেটাই করছেন। বিক্ষিপ্তভাবে একজন শিক্ষক যদি এ ধরনের কাজ করেন সে দায়ভার তো অন্য শিক্ষক নেবে না।
একই প্রতিষ্ঠানে এমন অভিযোগে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্তে তাদের দায় মুক্তি দেয়া হয়েছে। এই দায় মুক্তি পুলিশের তদন্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এটি একটি একাডেমিক বিষয়। তদন্তের বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠানের গভর্নি কমিটির বিষয়। তাদের দায়িত্বশীল যে জায়গাগুলো আছে সেগুলো তারা দেখবেন। তবে ফৌজদারি বিষয়গুলো আমাদের অংশ। এই বিষয়গুলো আমরা দেখছি। আমাদের কর্মকর্তারা নারী ও শিশুদের প্রতি অত্যন্ত সহমর্মিতা ও ভালোবাস দেখায়। ফলে এটা আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছি।
এদিকে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে করা মামলায় শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারেকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামির আইনজীবী চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে কারাবিধি অনুসারে তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এর আগে গত মঙ্গলবার আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট জাকী-আল-ফারাবী দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার দিনগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর কলাবাগানের বাসা থেকে মুরাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই রাতেই ভিকারুননিসা স্কুলের গভর্নিং বডির জরুরি সভায় শিক্ষক মুরাদকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরও আগে গত ২৪ ফেব্রæয়ারি ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক মুরাদকে প্রত্যাহার করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করে কর্তৃপক্ষ। পরদিন রবিবার মুরাদ হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর ক্যাম্পাসের ফটকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ