পশ্চিমারা ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে সেনা পাঠালে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে হুমকি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তার মতে, সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তের পরিণতি হবে দুঃখজনক। কারণ রাশিয়ার যেসব অস্ত্র রয়েছে তা পাশ্চাত্যের যেকোনো লক্ষবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকির ব্যাপারে আগেও এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পুতিন। তবে এবারই প্রথমবারের মতো তিনি স্পষ্ট ভাষায় পশ্চিমা দেশগুলোকে পারমাণবিক যুদ্ধের ব্যাপারে সতর্ক করলেন।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বার্ষিক রাষ্ট্রীয় ভাষণে পুতিন পশ্চিমাদের অভিযুক্ত করে বলেন যে- তারা রাশিয়াকে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় টেনে আনার চেষ্টা করছে। ইউক্রেন যুদ্ধকে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ সমস্যা আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এই যুদ্ধে হস্তক্ষেপ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সেটা পশ্চিমা নেতারা উপলব্ধি করতে পারছেন না। আমাদেরও এমন অস্ত্র রয়েছে যেগুলো পশ্চিমা দেশগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। তাদেরকে অবশ্যই এটা বুঝতে হবে। তারা পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি তৈরি করছে, যে যুদ্ধ মানব সভ্যতার ধংস ডেকে আনতে পারে।
গত সোমবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনে ন্যাটো জোটের সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা আছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্য দেশের সেনাদের ইউক্রেনে পাঠানো যেতে পারে, এজন্য ঐক্যমত্য দরকার। তবে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রিটেনসহ অন্যান্য ন্যাটো সদস্য দেশ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
এ প্রসঙ্গে অতীতে রাশিয়ায় নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর ব্যর্থ আক্রমণের উদাহরণ টেনে পুতিন বলেন, কিন্তু এবার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। তারা মনে করে এটি (যুদ্ধ) একটি কার্টুন। পশ্চিমা রাজনীতিকরা প্রকৃত যুদ্ধের অর্থ কী তা ভুলে গেছেন কারণ তারা গত তিন দশকে রুশদের মতো একই নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়নি।
পুতিন বলেন, পশ্চিমারা ইউক্রেনের সংঘাতে উস্কানি দিচ্ছে এবং রাশিয়া ইউরোপে আক্রমণ করতে চায় বলে মিথ্যাচার করছে। একই সময়ে তিনি বলেন যে, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিচ্ছে। তাই রাশিয়াকে এখন তার পশ্চিম সীমান্তে নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে হবে।
আগামী ১৫-১৭ মার্চ রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রায় নিশ্চিতভাবেই পুতিন আগামী ছয় বছরের জন্য পুনর্নির্বাচিত হতে চলেছেন। পুতিন তার ভাষণে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র আধুনিকীকরণ কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, রাশিয়া যেকোনো সময় কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য তৈরি আছে। নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মোতায়েন থাকার কথাও নিশ্চিত করেছেন পুতিন।
প্রসঙ্গত, ১৯৬২ সালে কিউবায় মিসাইল সংকটের পর মস্কোর সঙ্গে পাশ্চাত্যের সম্পর্ক এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কিউবায় পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনকে কেন্দ্র করে তখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।