পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, পুলিশের কোনো সদস্য যদি মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি ব্যবস্থা নেয়া হয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মাদকের সংশ্লিষ্টতা থাকলে শুধু মামলা দেয়া হয়। আর পুলিশ সদস্যদের শুধু মাদক খাওয়ার প্রমাণ মিললে চাকরি থাকবে না। চাকরিও যাবে সঙ্গে মামলাও হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের প্যারেড গ্র্যাউন্ডে ‘আইজিপি’স এক্সেমপ্ল্যারি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ (আইজি’জ ব্যাজ) ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ইউনিটদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কঠোর হুঁশিয়ারি দেন।
অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) ও প্যারেড উপ-কমিটির সভাপতি মো. কামরুল আহসান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এ সময় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এবার ৪৮৮ জন পুলিশ সদস্যকে ‘পুলিশ ফোর্স এক্সেমপ্লারি গুড সার্ভিস ব্যাজ-২০২৩ (আইজি’জ ব্যাজ)’ দেয়া হয়। আইজিপি তাদের ব্যাজ পরিয়ে দেন। এসময় তিনি ব্যাজপ্রাপ্তদের হাতে সনদও তুলে দেন। এটি পুলিশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, নিয়োগের সময় আমরা প্রতিটি সদস্যকে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে থাকি। যারা মাদকাসক্ত তাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি, মাদকাসক্ত হলে পুলিশে কেউ চাকরি পাবে না। কারণ মাদক ও দুর্নীতি সমাজের নীরব ঘাতক। মাদকবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশ পুলিশ জয়ী হবে। জঙ্গি-সন্ত্রাস যেভাবে নিয়ন্ত্রণে এনেছে, যেভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণেও সফল হতে হবে। এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহŸান জানাচ্ছি। জঙ্গি-মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি রয়েছে। যে কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রæত আমরা অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।
স্মার্ট বাংলাদেশের উপযুক্ত পুলিশ গড়ে তুলতে কাজ করার কথা জানিয়ে আইজিপি বলেন, পুলিশকে জনবান্ধব বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা কাজ করছি। থানাকে প্রতিটি মানুষের আস্থা ও ভরসার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠাত করতে চাই। যাতে সবাই নির্ভয়ে থানায় আসতে পারেন সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। এজন্য বেশিরভাগ থানাতেই সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে, যা রেঞ্জ ডিআইজি অফিস থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য সেবা দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজের জীবন দিয়ে পুলিশ সদস্যরা সেটি প্রমাণ করেছে।
পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা সর্বক্ষেত্রে প্রশংশিত হচ্ছে। আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়ার অধিকাংশ কাজ স্মার্ট পদ্ধতিতে সম্পন্ন করছি। ঘরে বসে আবেদন করতে পারছে, কোথায় পরীক্ষা সেটা জানতে পারছে, ফলাফলও ঘরে বসে পেয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে কোন দালাল বা ফরিয়া নেই। দেশবাসী এর সুফল ভোগ করছে। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ তথা প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। আপনাদের প্রযুক্তিনির্ভর, গণমুখী, সেবামুখী, জনবান্ধব তথা নারী ও শিশুবান্ধব বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪ উদ্বোধন করেন। বর্ণাঢ্য আয়োজনে ও ‘স্মার্ট পুলিশ, স্মার্ট দেশ; শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে শুরু হওয়া এবারের পুলিশ সপ্তাহ চলবে ৩ মার্চ পর্যন্ত।