আয়ের উপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। আট বছর আগে হাইকোর্ট এক রায়ে এ সংক্রান্ত আয়কর প্রদানের দুটি প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলো। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল মঞ্জুর করে গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দিয়েছেন। এই রায়ের ফলে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যারয়গুলোকে আয়ের উপর শতকরা ১৫ ভাগ হারে কর দিতে হবে। বিচারপতি বোরহানউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এই রায় দেন।
রায়ের পর রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এএম আমিনউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করি। আািপল বিভাগ আমাদের আপিল গ্রহন করে রায় দিয়েছেন। রায় অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আয়কর দিতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র চালানোর জন্য ট্যাক্স আহরণ দৈনন্দিন কাজ। অর্ডিন্যান্স অনুসারে সবার জন্য ট্যাক্স ধার্য করা আছে। ব্যক্তিদের জন্য ২৫ শতাংশ। সেখানে তাদের (প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়) কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই আয়কর দেওয়ার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোন সম্পর্ক নেই। ভ্যাট হলে ছাত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতো। এখন ট্যাক্স বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অর্থাৎ মালিকপক্ষকে দিতে হবে।
প্রসঙ্গত ২০০৭ সালের ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয় যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের উদ্ভূত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনঃনির্ধারণ করা হলো। ২০১০ সালের পহেলা জুলাই এনবিআরের আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজ ও উদ্ভূত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের হার কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।
এই প্রজ্ঞাপনগুলোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ৪৬ টি রিট করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ওই রিটের উপর জারিকৃত রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৬ সালে রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর প্রদানের জন্য জারিকৃত দুটি প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে ওই দুই প্রজ্ঞাপন অনুসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হতে যে আয়কর আদায় করা হয়েছে, তা ফেরত দিতে এনবিআরকে নির্দেশ দেয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে অর্থ ফেরত প্রদানের আদেশ স্থগিত করে সর্বোচ্চ আদালত। এছাড়া আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১৫ শতাংশ আয়কর নেওয়া থেকে এনবিআরকে বিরত থাকতে বলা হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা প্রায় অর্ধশত আপিল নিষ্পত্তি করে গতকাল আপিল বিভাগ ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই রায়ের ফলে এনবিআরের জারিকৃত দুটি প্রজ্ঞাপন বৈধতা পেল।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী ওমর সাদাত সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আপিল মঞ্জুর হয়নি, নিষ্পত্তি করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে আপিল বিভাগ কোন দিক বিবেচনায় নিষ্পত্তি করেছেন তা জানা যাবে।