নরসিংদীর রায়পুরায় ডিভোর্স দেওয়ার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সাবেক স্ত্রী লতা আক্তারের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন পাষÐ সাবেক স্বামী খলিলুর রহমান। এ ঘটনায় লতা আক্তার (২৮) কে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। লতা আক্তার নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল এলাকার মফিজুর রহমানের মেয়ে। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। লতার সাবেক স্বামী খলিলুর রহমান গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বেলাশী গ্রামের আতর আলী বেপারীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন গাড়ীচালক বলে জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার দুপুরে রায়পুরা উপজেলার মরজাল গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, লতা কয়েক বছর আগে শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দুই বছর পূর্বে নিজের পছন্দমত খলিলুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। বিয়ের বেশ কিছুদিন পর লতা জানতে পারেন খলিল পেশায় একজন ড্রাইভার। বিষয়টি লতা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক দ্বিধা-দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয় এবং ঘটনাটি মিমাংসার জন্য স্থানীয়ভাবে শালিশ দরবারও হয়। কিন্তু এতে কোনো সুরাহা হয়নি। এক পর্যায়ে লতা তার স্বামীকে ডিভোর্স দেন।
এতকিছুর পরও সংসার জোড়া লাগানোর আশায় স্বামী-স্ত্রী দু’জনই গত রোববার (২৫ ফেব্রæয়ারী) ঢাকা থেকে রায়পুরা উপজেলার মরজালে লতার বাবার বাড়ীতে আসেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই একই ঘরে অবস্থান করছিলো। বেলা দেড়টার দিকে হঠাৎ স্থানীয়রা লতার বাড়ীতে চিৎকার শুনে এগিয়ে এসে লতা ও খলিলকে দগ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। পরে স্বজনরা লতাকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করে। অপরদিকে অগ্নিদগ্ধ সাবেক স্বামী খলিলুর রহমানকে এলাকাবাসী উদ্ধার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুরে স্বামী খলিলুর রহমান মৃত্যুবরণ করেছেন বলে রায়পুরা থানার ওসি মোঃ সাফায়েত হোসেন পলাশ জানান।
এব্যাপারে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা মোঃ সাফায়েত হোসেন পলাশ জানান, গত রবিবার স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ঢাকা থেকে রায়পুরার মরজালে লতার বাবার বাড়ীতে আসে। তারা দু’জনে একই ঘরে ছিল। কিন্তু কে কাকে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়েছে তা এখনো জানাযায়নি। এ রিপোর্ট লেখাপর্যন্ত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ থানায় করেননি। তবে নিহত খলিলুর রহমানের লোকজন থানায় আসতেছেন বলে ওসি জানান।
অপর দিকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. এএনএম মিজানুর রহমান জানান, লতা আক্তার নামে একজনকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলেও তার শরীরের অধিকাংশই পুড়ে গেছে। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে লতার খালু ফরহাদ হোসেন শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তরিকুল ইসলামের বরাত দিয়ে জানান, লতার শরীরের ৮০% দগ্ধ রয়েছে। বর্তমানে তাকে জরুরি বিভাগের অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।