দেশে জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণে নির্দেশিকা জারি করতে যাচ্ছে সরকার। এটি ভবন নির্মান নীতিমালা ও বিধিমালাতেও অন্তর্ভূক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহায়তায় এটি কার্যকর করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। নতুন ভবন নির্মাণের পাশাপাশি বিদ্যমান ভবন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও এ নির্দেশিকা প্রযোজ্য হবে।
বৈশ্বিক জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণের ওপর জোর দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ‘বিল্ডিং এনার্জি এফিশিয়েন্সি এন্ড এনভায়নমেন্ট রেটিং- বিইইইআর’ নামে গাইডলাইন তৈরি করেছে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (¯্রডো)। এটির নীতিগত অনুমোদন পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সার সংক্ষেপ পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর এ গাইডলাইন রাজউকসহ স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতেও সরবরাহ করা হবে। নির্দেশিকা মেনে ভবন নির্মাণ করলে ভবন মালিকরা পাবেন সরকারি সুবিধা-ছাড় পেতে পারেন। আবার অমান্যে হতে পারে সাজা-জরিমানা।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দেশে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। মোট বিদ্যুতের ৫৬ শতাংশ ব্যবহার করেন আবাসিক গ্রাহকরা। আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভবন নির্মাণ করলে বিদ্যুতের অযাচিত ব্যবহার কমবে। তাই জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত গাইডলাইনটি ¯্রডোর মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী কার্বন নি:সরণও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি বছরই গাইডলাইনটি জারি করে বাস্তবায়ন শুরু হবে।
¯্রডোর গবেষণা ও পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে অবকাঠামো নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি পরিমাণ জ্বালানি, পানি ও নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ধারা থেকে বেরিয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ী ভবন বা অবকাঠামো নির্মাণকে উৎসাহিত করতে চায় সরকার। নতুন গাইডলাইনটি মেনে ভবন নির্মিত হলে আলো-বাতাস বেশি পরিমাণে প্রবেশ করবে। ফলে বিদ্যুতের ব্যবহারও কমে আসবে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে ভবন কীভাবে তৈরি করা হবে সেই ধরনের নির্দেশনা রয়েছে। তবে এখন সরকার জ্বালানি ও পরিবেশকে আরো গুরুত্ব দিয়ে নতুন গাইডলাইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করলে ভবন মালিকরা সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা পাবেন। এজন্য ক্রেডিট পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। পয়েন্টভেদে সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে ভবন নির্মাণে সাশ্রয়ী ঋণ প্রদান, হ্রাসকৃত হারে সিটি ও পৌর কর পরিশোধের সুবিধা। ১০ হাজার বর্গফুটের বেশি স্থানজুড়ে নির্মিত স্থায়ী ভবন বা স্থায়ী ভবনে আড়াই হাজার বর্গফুট জুড়ে থাকা স্থানের জন্য এই বিইইইআর সনদের জন্য আবেদন করা যাবে।
এই গাইডলাইনে ১০টি ক্যাটাগরিতে ৪৯টি ক্রেডিট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৪৯টি ক্রেডিটের বিপরীতে ১১৫ পয়েন্ট বিবেচনা করে সুবিধা দেওয়া হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং, প্রজেক্ট সাইট ম্যানেজমেন্ট, বিল্ডিং ইনভলভ ডিজাইন, ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট, এনার্জি ম্যানেজমেন্ট, ইনডোর এনভায়রনমেন্ট, কনস্ট্রাকশন মেটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট, হেলথ অ্যান্ড সেফটি, ইনোভেশন, বোনাস পয়েন্ট। সব মিলিয়ে ১১৫ পয়েন্ট। পয়েন্ট অনুযায়ী সুবিধা পাবেন ভবন মালিকরা।