বসন্তের আগমনে প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজেছে। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতালে ফাগুনের উত্তাল হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে আসছে ফাগুন।
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতি রাঙিয়ে উঠে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল। কিন্তু কালের বিবর্তনে ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্ত প্রায়। এক-দেড় যুগ আগেও বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তায়, পতিত ভিটায় প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেত। গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিত, এসেছে বসন্ত।
প্রাকৃতিক ভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন শিমুল গাছ। জানায়ায়, এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজগুণ। শীতের শেষে শিমুলের পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে যায়। বাতাসে আপনা-আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই নতুন গাছের জন্ম হয়।
অন্যান্য গাছের মত এ গাছ কেউ শখ করে রোপণ করে না। নেওয়া হয় না কোন যতœ। প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য।
অতীতে নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি,দিয়াশলাইয়ের কাঠি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় শিমুল গাছ রোপণ করা হয়নি । ফলে আজ বিলুপ্তির পথে শিমুল গাছ। প্রবীণ ব্যক্তি হোসেন আলী বলেন, আগে গ্রামে প্রচুর শিমুল গাছ ছিল। এখন আর দেখা যায় না।
মতলব মুন্সী বলেন, একটি বড় ধরনের গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। তবুও এই গাছ বিলুপ্তির পথে। আগের যুগে শিমুল তুলা দিয়ে লেপ , তোষক, বালিশ, তৈরি করা হতো। কিন্তু শিমুল তুলার মূল্য বৃদ্ধিতে গার্মেন্টেস এর জুট কাপড় দিয়ে তৈরি তুলা ,পাম্পের তোষক,বালিশ সহ পঞ্চ,কাপাশ তুলা আজ শিমুল তুলার স্থান দখল করে নিয়েছে। তাছাড়া শিমুল ফল ফেটে তুলা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে । তাই শিমুল গাছকে একটি বাড়তি ঝামেলা হিসেবে দেখতে শুরু করেছে গ্রাম বাংলার মানুষ ।
উল্লেখ্য, বর্তমানে শিমুল তুলা সাড়ে ৪ শত টাকা থেকে ৫ শত টাকা কেজি, আর গার্মেন্টেস এর জুট দিয়ে তৈরি তুলা প্রতি কেজি ৭০ টাকা (তোষক) ১৫০ টাকা (লেপ) ,কাপাশ তুলা ২৫০ টাকা এবং পজ্ঞের তুলা ২০০ টাকা, ফোম ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে লেপ তোষক তৈরিকারক ও বিক্রেতা রহমত আলী জানান।
বাণিজ্যিকভাবে এখন দেশের কোথাও এই শিমুলগাছ বা তুলা চাষ করা হয় না। এটি প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। যার কারণে শিমুলগাছ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এর তুলাটা খুবই ভাল এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে মানুষ আসল তুলার মর্ম বুঝতো। তিনি আরও বলেন, আমরা তুলা চাষ বৃদ্ধির জন্য স্বল্প আকারে হলেও তুলা গাছের চারা তৈরী করে জনগণের মাঝে বিতরণ করে থাকি।