বিচারের দ্বিতীয় ধাপে টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর রূপা খাতুন ধর্ষণ হত্যা মামলা। ফাঁসির চার আসামির মৃত্যুদন্ড নিশ্চিতকরনে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিলের উপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই মামলার দ্বিতীয় ধাপের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিচারের প্রথম দিনে মামলার পেপারবুক পড়া শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এই মামলার পেপারবুক আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
এদিকে চাঞ্চল্যকর খুনের এই মামলার বিচারের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে ছয় বছর আগে। দ্বিতীয় ধাপের বিচার এতদিনে শেষ না হওয়ায় রূপার পরিবারের সদস্যরা ছিলেন হতাশ। এখন মামলাটির দ্বিতীয় ধাপের বিচার শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভিকটিম পরিবারের সদস্যরা।
একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করতেন রূপা খাতুন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করেন বাসের চালক ও সহকারিরা। হত্যার পর লাশ টাঙ্গাইলের মধুপুর বনে ফেলে দেওয়া হয়। লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে রূপার মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করে। তিনদিন পর রূপার ভাই মধুপুর থানায় এসে লাশের ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করেন। এই মামলায় পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর, এবং চালকের সহকারি শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে।
পাঁচ আসামিই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তাদেরকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ওই বছরের গত ২৯ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। ৩ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহন শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহন, জেরা, আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শেষে মাত্র ১৪ কার্যদিবসে বিচার কাজ শেষ করেন টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়া। ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি দেওয়া রায়ে বাসের চালক হাবিবুর সহ চার আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। বাসের সুপার ভাইজার সফর আলীকে দেয়া হয় সাত বছরের দন্ড। যে বাসের মধ্যে রূপাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয় তার মালিকানা রূপার পরিবারকে দেওয়ার আদেশ দেন বিচারক।
এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন দন্ডিতরা। পাশাপাশি মৃত্যুদন্ড নিশ্চিতকরনে ডেথ রেফারেন্স আসে হাইকোর্টে। নৃশংস এই ঘটনার ছয় মাসের মধ্যে মামলার তদন্ত ও বিচারের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়। এত দ্রæত বিচার কাজ শেষ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপ্রার্থী জনগণ ও মানবাধিকার কর্মীরা। মামলার তদন্ত ও বিচারের প্রথম ধাপ ছয় মাসের মধ্যে শেষ হলেও মামলা জটের কারনে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স শুনানিতে বিলম্ব হয়। ফাঁসির রায় কার্যকর না হওয়ায় রূপার পরিবারের সদস্যরা প্রতি বছরই গণমাধ্যমে তাদের হতাশার কথা ব্যক্ত করেন। তবে এখন ডেথ রেফারেন্স ও আপিল হাইকোর্টে শুনানি শুরু হওয়ায় চলতি বছরেই এই মামলার বিচার শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, ভিকটিমের পরিবারকে আর বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মামলাটির শুনানি শুরু হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শ্রম দেব যাতে দন্ডিতদের নি¤œ আদালতের দেওয়া সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে।