spot_img

অবৈধ মজুদদারদের গণধোলাই দেয়া উচিত

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নিত্যপণ্য মজুদ করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর সঙ্গে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে জড়িতদের যোগস‚ত্র থাকতে পারে। নির্বাচনের আগে দুর্ভিক্ষ ঘটানোর ষড়যন্ত্র ছিল, সেটা এখনো আছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস লুকিয়ে রেখে পচিয়ে ফেলে দেবে, আর তার দাম বাড়াবে? অবৈধ এসব মজুদদারদের গণধোলাই দেওয়া উচিত। কারণ সরকার কিছু করলে, বলবে সরকার করছে। তার থেকে পাবলিক যদি প্রতিকার করে তাহলে সব থেকে ভাল হয়। কেউ কিছু বলতে পারবে না।
গতকাল শুক্রবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাম্প্রতিক জার্মানী সফরের অর্জন ও সফলতা তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লিখিত বক্তব্যে পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ক্ষমতাশালী দেশগুলোর দ্বিমুখী নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখি যে, বিশ্ব মোড়লরা দুদুখো নীতিতে বিশ্বাস করে। এক জায়গায় ফিলিস্তিনের সমস্ত জমি দখল করে ফেলছে, ওটা ইনভেশন না, আর ইউক্রেইনেরটা ইনভেশন। তো, দুমুখো নীতি কেন হবে, সেটা আমার প্রশ্ন ছিল। অন্যদের দ্বিমুখী নীতির বিপরীতে নিজের স্পষ্ট অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি জানি, অনেকে স্পষ্ট করে বলবে না সাহস করে। নানা জনের নানা দুর্বলতা থাকে, আমার তো কোনো দুর্বলতা নাই। আমারতো চাওয়া পাওয়া নাই, আমার কাছে ক্ষমতাটা হল, ‘থাকে ল²ী, যায় বালাই’ বলে একটা কথা আছে না, আমার কাছে সেটাই। থাকলে ভালো, আমি দেশের জন্য কাজ করতে পারছি। না থাকলে আমার কোনো আফসোস নাই। আমার একটা লক্ষ্য ছিল ২০২১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে হবে, বাংলাদেশকে একটা ধাপ তুলতে হবে, আমি সেটা করে দিয়েছি। আর এখন আমি ক্ষমতা আসব কি আসব না, আমিতো পরনির্ভরশীল হয়ে করি নাই। আমার একমাত্র নির্ভরতা হচ্ছে, আমার দেশের জনগণ। ইউক্রেইন ও ফিলিস্তিনের ঘটনাপ্রবাহে ক্ষমতাশালী দেশগুলোর দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করে আবারো যুদ্ধ বন্ধের আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টকে সরাসরি জিজ্ঞেস করি যে, যুদ্ধটা কীভাবে বন্ধ করা যায় সেটা আমাকে বলেন। আমার সোজা প্রশ্ন ছিল, যুদ্ধ কীভাবে বন্ধ করা যায়, এটাতে তো সবাই কষ্ট পাচ্ছে; মহিলা, শিশু, যুব সমাজ কত জীবন দিচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা হলেও সেই একই কথাই আমি বলব যে, আমি যুদ্ধ চাই না, আপনি যুদ্ধ বন্ধ করেন। আমি আমার কথা বলে যাব, তারপর কেউ বুঝলে বুঝুক, আমার কিছু আসে যায় না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের পর জেলেনস্কির কী উত্তর ছিল, এক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনি অনেক ব্যাখ্যা দিলেন, কী কী হয়েছে, অনেক কিছু।’ জার্মানির মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ হয়। সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। সব আলোচনাই দ্বিপক্ষীয় হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশে^র বিভিন্ন দেশে নির্বাচনের রেজাল্ট ডিক্লেয়ার করতে ১২ থেকে ১৩ দিন সময় লাগলেও তাদের ইলেকশন ফ্রি-ফেয়ার। আর বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট এসে গেল, সেটি ফ্রি-ফেয়ার না। সুতরাং এই রোগের কোনো ওষুধ আমাদের কাছে নেই। শক্তি আমাদের জনগণ, আমি সেটাই বিশ্বাস করি।’
টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই: ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে টাঙ্গাইল শাড়ির নিবন্ধন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, অলরেডি আমরা আবেদন করেছি। কয়েকদিন আমি সমানতালে টাঙ্গাইলের শাড়ি পড়লাম এই জন্য যে, যাতে দেখাতে পারি এটা আমাদের। কাজেই এটা অন্য কেউ নিতে পারবে না। জামদানি ও টাঙ্গাইলের মত দেশীয় শাড়ির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনুরাগের কথা তুলে ধরে একজন সাংবাদিক বলেন, ‘আমি ধারণা করি, আপনার পরনে এখনো টাঙ্গাইল শাড়ি।’ তখন তাকে শুধরে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সংবাদ সম্মেলনের জন্য তিনি গায়ে জড়িয়েছেন গাজীপুরের সফিপুর থেকে সংগ্রহ করা সিফন শাড়ি। হাসতে হাসতে এর নাম তিনি দিয়ে দেন ‘সফিপুর শিফন’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমাদের আনসার-ভিডিপির তৈরি করা। এটার নাম দিলাম সফিপুর শিফন। সবাই ফ্রেঞ্চ শিফনের প্রশংসা করে, এটার নাম দিলাম সফিপুর সিফন। ওরা শাড়ি তৈরি করে, আমি কিনে উপহার দিই। আজকে পরে আসলাম।
গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনেছি, সুফল পাচ্ছে দেশবাসী: প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশে মার্চের দিকে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে বলে তিনি নির্বাচনের আগে মন্তব্য করেছিলেন, সেই শঙ্কা এখনও আছে কিনা। আর বাজার কারসাজি কীভাবে মোকাবেলা করা যায়। উত্তর দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ষড়যন্ত্র তো ছিল, ষড়যন্ত্র তো আছে। ষড়যন্ত্র বারবার হচ্ছে। আপনারা জানেন, আমি আাসর পর থেকে বার বার আমাকে বাধা দেওয়া, ক্ষমতায় যেন না যেতে পারি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনাই ধরেন না কেন, রাসেলকেও তো ছাড়েনি, কেন, যেন ওই রক্তের কেউ বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে। আমি আর আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম, বেঁচে গেছি, ফিরে এসে দায়িত্ব নিয়েছি। আমার চেষ্টাই হচ্ছে, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতি দেশ স্বাধীন করেছে, সেটাকে প‚রণ করা। ষড়যন্ত্র প্রত্যেকবারই হচ্ছে, বারবার-আজকে মানুষের ভোটের অধিকার, আমরাই আন্দোলনের মাধ্যমে সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি, গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনেছি, তার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত সাত জানুয়ারি নির্বাচনটা যাতে না হয়, তার জন্য একাটা বিরাট চক্রান্ত ছিল, আপানার জানেন। আপনারা ২৮ অক্টোবরের ঘটনাটা একবার চিন্তা করেন। ২০১৩ সালের যে অগ্নিসন্ত্রাস, ২০১৩, ’১৪, ’১৫, এরপর আবার গতবছর ২৮ অক্টোবর।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এই ধরনের নির্বাচন বানচালের পক্ষে, তারা যখন দেখল যে ইলেকশন কিছুতেই আটকাতে পারবে না, কারণ মানুষের একটা স্বতঃস্ফ‚র্ততা আছে, তখন চক্রান্ত হল যে জিনিসের দাম বাড়বে, সরকার জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে, তখন আন্দোলন করে সরকারকে উৎখাত করব। এটা তাদের পরিকল্পনার অংশ। কাদের সেটা আপনারা ভালো বোঝেন, আমি আর কারো নাম বলতে চাই না, বলার দরকারও নেই আমার। কিন্তু এই চক্রান্তটা আছে। তবে এই কথাটা আমি বলতে পারি, এই যে কালকে (বৃহস্পতিবার) বৃষ্টি হল, কথায় তো আছে, ‘যদি বর্ষে মাঝের শেষ, ধন্য রাজা প‚ণ্য দেশ’।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাঘের শেষে কিন্তু বৃষ্টি হল, আবার এই ফাল্গুনের শুরুতেও কিছু বৃষ্টি। আমের মুকুলগুলো আবার তরতাজা হয়ে উঠছে। ক্ষেতে কেবল ধানের চারা রোপণ, সেখানেও সেচের আর প্রয়োজন হবে না এই বৃষ্টি যদি ভালোভাবে হয়। মাটির ময়েশ্চার বাড়বে, ফসল ভালো হবে। ফুলের হয়ত একটু ক্ষতি হবে, কিন্তু খাদ্যপণ্য উৎপাদনের কোনো অসুবিধা হবে না।’
সেই মহামারীর সময় থেকে দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্প‚র্ণ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের খ্যাদ্য নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদী না থাকে। সেটা শুধু বলা না, কার্যকরও করেছি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় তো বাংলাদেশে অভাব হলে বলত পেটে ভাত নাই। এখন কি সেই কথাটা বলে? বলে না? কী বলে? ডিমের দাম, পিঁয়াজের দাম, মুরগির দাম, গরুর মাংসের দাম, অথবা পাঙ্গাশ মাছের পেটি খেতে পারছে না, এই তো? এটা কি একটা পরিবর্তন না? ১৫ বছরে তো এই পরিবর্তনটা এসেছে, সেটাতো স্বীকার করবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ বছর আগে কী ছিল? ভাতের জন্য হাহাকার ছিল। একটু নুন ভাত, ভাতের ফ্যান চাইত, এখন তো ভিক্ষা চায় না। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশ উন্নত হয়।’ প্রশ্নকর্তা সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আপনি নিজেই তো বললেন, ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানো। আপনার কি এটা মনে হয় না, এই যে যারা সরকার উৎখাতের আন্দোলন করে, এখানে তাদেরও কিছু কারসাজি আছে? এর আগে এরকম পিঁয়াজের খুব অভাব, দেখা গেল বস্তাকে বস্তা পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এই লোকগুলোরে কি করা উচিত? সেটা আপনারাই বলেন।’
ইউরোপ জানত যে ইলেকশনে আমিই জিতে আসব: ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ভালো বন্ধুত্বপ‚র্ণ সম্পর্ক আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপসহ প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের যেমন রাষ্ট্রীয় একটা সম্পর্ক আছে, সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার কারণে সুবিধা হয়েছে। যে কারণে ইলেকশন নিয়ে আমাদের কেউ কোনো কথা বলেনি। তারা নিজেরাই জানত যে ইলেকশনে আমিই জিতে আসব। যারা আমাকে চায়নি, তাদের মাধ্যমেই কথা ওঠে, প্রশ্ন ওঠে।’
দেশে রাজনৈতিক দলের অভাব: পাকিস্তানের সাম্প্রতিক নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা করতে দীর্ঘ সময় নেওয়া হয়েছে এবং এখনো সরকার গঠন হয়নি। শেখ হাসিনা পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘দেশটি এখন তো বোধ হয় একটা সমঝোতায় এসেছে, কে প্রেসিডেন্ট হবে, কে কী হবে। এ রকম যদি আমাদের দেশে হতো, তাহলে বোধ হয় সমালোচনাকারীরা খুশি হতো। তেমন হয়নি বলে অনেকের মন খারাপ। তবে মন খারাপ ভালো হয়ে যাবে।’ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আসলে রাজনৈতিক দলের অভাব রয়েছে বাংলাদেশে। আমাদের প্রতিপক্ষ যারা আছে, তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলাম। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ গণমানুষের কথা বলে গঠিত হয়েছিল। কিন্তু মিলিটারির ডিক্টেটরদের পকেট থেকে তৈরি হয়েছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি (জাপা)। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে যে দল তৈরি হয়, তাদের মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। তারা চায় কেউ তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেটা করতে গিয়ে তারা ২০০৮-এর নির্বাচনে ধরা খায়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেল আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্য জোট পেল ৩০ টি আসন। এরপর থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ জ্বালাও-পোড়াও করে যাচ্ছে। রাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয়, তবে জনগণের কল্যাণেই কাজ করতে হবে।
সড়কে ট্রাফিক লাইট সচল করার নির্দেশ: সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক লাইট সিস্টেম ভালোভাবে চালুর নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার আইজিপির সাথে কথা বলেছি যে ট্রাফিক লাইটগুলো সচল করে দিয়ে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য। আগে অতিরিক্ত চাপ ছিল, এখন সেই চাপ নাই। আমরা যদি ট্রাফিক লাইটের পদ্ধতিতে চলে যাই; বেশি সময় নয়, সময় কম কম করে যদি বারবার ছেড়ে দেই, মানুষ একটু যদি চলমান থাকে, যতক্ষণই লাগুক, অনেকক্ষণ বসে আছি সেই অনুভ‚তিটা হবে না।’ তিনি বলেন, কিছু কথা বলা আমাদের বাঙ্গালির একটা চরিত্র। একটা দলই আছে, কিছুই ভালো লাগে না। তারপর যখন হয়, তখন তারা এটা উপভোগ করেন।’
রমজানে কোনো জিনিসের অভাব হবে না: প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না। ইতিমধ্যে সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা করা আছে। এটা নিয়ে অনেকে কথা বলবে, কিন্তু কোনো অসুবিধা হবে না। রমজান তো কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য, রমজানে একটু কম খায়। তবে আমাদের সাইকোলজি হচ্ছে রমজান আসলে যেন খাওয়া-দাওয়ার চাহিদা একটু বেড়ে যায়- এটাই হল বাস্তবতা। সাধারণত রমজানে যে বিষয়গুলো, যেমন ছোলা, খেজুর, চিনি, এগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা। এগুলো পর্যাপ্ত আনার ব্যবস্থা আছে, এগুলো নিয়ে সমস্যা হবে না। সেই ব্যবস্থা অনেক আগেই করে রেখেছি।’ সংরক্ষণের ব্যবস্থা অনেক সময় ‘শাখের করাতের মত’ পরিস্থিতি তৈরি করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি একটা এলাকার কথা বলি, যেমন পাবনায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, মাচা করে করে বাতাস দিয়ে রাখা হয়। আপনি জানেন, কৃষকরা কত চালাক, তারা কিন্তু ওই বাজারের দাম দেখে তারপরে ছাড়ে। মোবাইল ফোন সবার হাতে আছে, দামটা তারা ঠিকই খবর পেয়ে যায়, কোথায় কি দাম। দাম যদি না পায়, বাজারে ছাড়ে না। এটা অনেকটা শাখের করাতের মতো। আপনি উৎপাদন করবেন, কৃষক উৎপাদন করবে, উৎপাদিত পণ্যটা সে বাজারজাত করবে, আপনি যদি এখন বেশি দাম কমাতে যান, কৃষক তার ম‚ল্য পাবে না। আবার দাম বাড়লে যারা নির্দিষ্ট আয়ে চলতে হয়, তাদের জন্য কষ্ট। প্রত্যেক বিভাগে আলাদা আলাদা পণ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন আমরা শুরু করেছি। কোন কোন এলাকায় পেঁয়াজ হয়, সেগুলো আমরা খুঁজে বের করেছি। আগামীতে বাইরে থেকে আনতে হবে না।
একজন সংবাদিক প্রশ্ন করেন, আমরা চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার একটা চাপের ভেতরে আছি। এ অবস্থায় বর্তমান ভ‚-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মিডল পাওয়ার বা ইমার্জিং পাওয়ারের একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির চিন্তা কি আপনি করছেন? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সাধারণ একজন মানুষ। ছোট একটা ভ‚খন্ডে বিশাল জনগোষ্ঠী। আমি সেটি নিয়েই ব্যস্ত। তবে কোথাও কোনও অন্যায় দেখলে আমি আমার কণ্ঠ সোচ্চার করি। প্রতিবাদ করি। যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই-এই কথাটা বলি। কিন্তু কোনও প্ল্যাটফর্ম করার মতো দক্ষতা আমার নেই। যোগ্যতাও আমার নেই। সেই চিন্তাও আমার নেই। আমি মনে করি অনেক প্ল্যাটফর্ম হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে তো কাজের সময় কাজে লাগে না, সেটা হলো বাস্তব। না হলে আজ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা কাউন্সিলে প্রস্তাব আসে। সেখানে ভেটো দেওয়া হয়। বাংলাদেশের যুদ্ধ চলার সময়ও এই অবস্থাটা আমরা দেখেছি।’
লিখিত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিউনিখে আমার এই ফলপ্রস‚ সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের আকার নয় বরং নীতির শক্তিতেই যে মানবতার রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক মুক্তি, এবারের সম্মেলনে আমি এই বার্তাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছি।’ পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসম‚হের মাধ্যমে বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসম‚হের সাথে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আরও দৃঢ় হয়েছে এবং সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ