পরিবেশ অধিদপ্তরের (ঢাকা অঞ্চল) পরিচালক সৈয়দ নজমুল আহসান (৫৬) ও তার স্ত্রী নাহিদ বিনতে আলমের (৪৮) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তার স্ত্রী নাহিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগের দিন বুধবার বিকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান সৈয়দ নজমুল আহসান। হাসপাতালের একটি সূত্র প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, অতিরিক্ত মদপানে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ মন্তব্য করেননি।
এদিকে সৈয়দ নজমুল আহসানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। গতকাল পৃথক পৃথক শোকবার্তায় তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় পরিবেশমন্ত্রী জানান, নাজমুল আহসান পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের বায়ুমান শাখার পরিচালক পদে কর্মরত থাকাকালীন দেশের বায়ুমানের উন্নয়নে সাধ্যমতো চেষ্টা করে গেছেন। তার মতো একজন সদালাপী কর্মকর্তার অকাল মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
জানা গেছে, সৈয়দ নাজমুল আহসান ১৯৯৬ সালে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগ দেন। ২০১৭ সালে তিনি পদোন্নতি পেয়ে পরিচালক হন। তার গ্রামের বাড়ি মাগুড়া সদরে। এই দম্পতি দুই কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। তাদের মধ্যে একজন এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। নজমুল আহসানের ভাই সৈয়দ আবু জাফর জানান, তার ভাইয়ের মৃত্যুতে মিরপুর মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। নজমুলের স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকেও মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী ছাব্বীর আহম্মদ জানান, বুধবার মিরপুর-২ অফিসার্স কমপ্লেক্সের বাসায় স্বামী-স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে পরিবারের লোকজন নজমুল আহসানকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। একই সময় তার অসুস্থ স্ত্রী নাহিদ বিনতে আলমকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। গতকাল তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মিরপুর থানার ওসি আরো জানান, তাদের কী কারণে মৃত্যু হয়েছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে সঠিক তথ্য জানা যাবে। তাদের পরিবার যদি অভিযোগ করে এরপর তদন্ত করে দেখা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, নাজমুল আহসানের ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়েছে। তার স্ত্রীর কী হয়েছে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা আর কোনো কথা বলেননি।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, তাদের মৃত্যুর সনদে অ্যালকোহল পয়জনিং লেখা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তারা বাসায় মদপান করেছিলেন। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে নজমুল আহসানের মরদেহ গতকাল সকালে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়। পরে নাহিদের মরদেহও একই মর্গে পাঠানো হয়।
মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মিরপুর থানার পরিদর্শক এসএম কামরুজ্জামান বলেন, তাদের শরীরে বাহ্যিক কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। পুলিশ কীভাবে ওই দম্পতির মৃত্যুর খবর পেল, তা জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতালে নেয়ার পরপরই মারা গেছেন। সে কারণে হয়ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছে। তাদের ভর্তি টিকিটে ‘পুলিশ কেইস’ লেখা ছিল কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, বিষক্রিয়ার কারণে পুলিশ কেইস লেখা থাকতে পারে, ময়নাতদন্তের পর সবকিছু জানা যাবে। এটা ফুড পয়জনিং থেকে বা অন্য কোনো কারণে হতে পারে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শফিউর রহমান বলেন, সৈয়দ নাজমুল আহসানকে হাসপাতালে আনার পরপরই চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আগেই মারা গিয়েছিলেন। এর চেযে বেশি কিছু জানি না। আর বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউর রহমান বলেন, ‘আমি নাহিদ বিনতে আলমের মৃত্যুর খবর শুনেছি। তবে কী কারণে মারা গেছেন তা জানতে পারিনি।