রাজশাহীতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার পথে আওয়ামী লীগ কর্মী জিয়ারুল ইসলাম (৩৬) নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। তাকে মাথায় ও শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জেলার তানোর উপজেলা সদরের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তালন্দ ইউনিয়নের বিলশহর গ্রামের রাস্তায় খুন হন আওয়ামী লীগ কর্মী জিয়ারুল। তিনি তালন্দ ইউনিয়নের বিলশহর গ্রামের মোহির আলীর ছেলে। গতকাল বুধবার ভোরে গ্রামের সড়ক থেকে পুলিশ তার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে। পরে বেলা ১১টায় ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক নারীসহ তিনজনকে আটক করেছে।
নিহতের বড়ভাই রবিউল ইসলাম জানান, ‘অমর একুশে ফেব্রæয়ারি উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে বিলশহর গ্রামের নিজ বাড়ি ফিরছিলেন জিয়ারুল। বিলশহর গ্রামের মোকছেদের বাড়ির কাছে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। জিয়ারুলের মাথায়, কানের উপর, দুই পায়ে, পেটের এক সাইডে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার একটি কান ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কেটে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এছাড়া তার লাশের পাশেই মোটরসাইকেল পড়ে ছিলো। রাত অনুমান আড়াই টার দিকে মাছ ধরতে লোকজন ওই রাস্তা দিয়ে যাবার সময় জিয়ারুলের লাশ দেখতে পেয়ে আমাদের খবর দেয়। বিষয়টি আমরা তানোর থানায় জানাই। রাত সাড়ে ৩টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।’
রবিউল ইসলাম আরো বলেন, ‘দলীয় কোন পদ না থাকলেও এলাকার লোকজন তার কথা শুনতো। এলাকায় তার একটা রাজনৈতিক ভাল অবন্থান ছিলো। রাজনৈতিক কারণে ভোটের পর থেকে তালন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান ও তার লোকজন আমার ভাইকে ব্যাপক হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন।’
অন্যদিকে এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, গত সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান মেম্বারের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। নিহত জিয়ারুল ছিলেন বাবু চেয়ারম্যানের পক্ষের লোক। গত সংসদ নির্বাচনে বাবু চেয়ারম্যান ও তার পক্ষের নেতাকর্মীরা দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর পক্ষে কাজ করেন। গত ৭ জানুয়ারি ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরদিন হাসান মেম্বারের নির্দেশে নিহত জিয়ারুলের একটি গভীর নলকূপে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। জিয়ারুলকে এলাকা ত্যাগের জন্যও হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন হাসান মেম্বারের অনুসারীরা। হাসান মেম্বার ও তার অনুসারীদের ভয়ে জিয়ারুল লালপুর বাজারের রাস্তা দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়। অন্য রাস্তা দিয়ে জিয়ারুল চলাচল করতো। তার নিরাপত্তাহীনতার কথা রাজনৈতিক নেতাদেরসহ থানা পুলিশকেও জানিয়েছিল।
এদিকে গতকাল বুধবার ভোরে তানোর থানা পুলিশ ফরহাদ, শাওন ও হাসান মেম্বারের দ্বিতীয় স্ত্রী ফুলবানু সুমিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। তাদের থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মেম্বারসহ তার অনুসারীরা ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
এ ঘটনার বিষয়ে গোদাগাড়ী সার্কেল (এএসপি) সোহেল রানা জানান, তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ছুটিতে আছেন। রাতে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আধিপত্যে বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
তিনি জানান, জিয়ারুলের মাথায় ভারীবস্তুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া তার পেট ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া অন্য কোথাও হত্যা করে মরদেহ বিলশহর গ্রামের উত্তরপ্রান্তে ফেলে দেওয়া হতে পারে। তবে মরদেহের পাশেই তার মোটরসাইকেলটি পড়েছিল। এই হত্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান চলছে।
স্থানীয়রা জানান, জিয়ারুল রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানীর চাচাতো ভাই। জিয়ারুল হত্যাকাÐের পর গোলাম রাব্বানী অভিযোগে জানান, গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে জিয়ারুল তার পক্ষে কাজ করেন। তার ব্যাপক ভ‚মিকায় লালপুর স্কুল ভোট কেন্দ্রে কাঁচি, নৌকার চেয়ে ছয় শতাধিক ভোট বেশি পায়। ভোটের পর থেকে প্রতিপক্ষের হুমকিতে ছিলেন তিনি। কয়েকদিন আগে নিহত জিয়ারুলের একটি কাঁচামালের গুদামে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করে। জিয়াউর রহমানকে এলাকা ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল। তার পক্ষে কাজ করায় প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা জিয়ারুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী।