spot_img

শোক ও গৌরবের একুশে আজ

গৌরবদীপ্ত, শোকে বিহবল ভাষা আন্দোলনের সেই গৌরবোজ্জ্বল দিনটি এলো। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি’ আজ। আজ ‘মাথা নত না করা’র অমর একুশে। মহান শহীদ দিবস। ভাষার অধিকারের পক্ষে লড়াইয়ের পাশাপাশি, ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন শোষণের বিরুদ্ধে একুশ ছিল বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ। নিজস্ব জাতিসত্তা, স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার সংগ্রাম হিসেবেও এর রয়েছে আলাদা তাৎপর্য। তবে এবার শুধু দিবস পালন নয়, অমর একুশের ৭২ বছর পূর্তি। আজ থেকে ৭২ বছর আগের এই দিনটি ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রæয়ারি। ঢাকার রাজপথ হয়ে উঠেছিল বিক্ষোভে উত্তাল। পাকিস্তানি শাসকদের হুমকি-ধমকি, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভেঙে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পথে নেমে এসেছিল ছাত্র, শিক্ষক, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী অসংখ্য মানুষ। সেদিন বসন্তের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তারা বজ্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছিল, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। তখন পলাশ-শিমুলে রক্তিম হয়ে উঠেছিল বাংলার দিগন্ত। গুলি চালানো হলো মিছিলে। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হলো দেশের মাটি। এক অভ‚তপূর্ব অধ্যায় সংযোজিত হলো মানব ইতিহাসে। অমর একুশের পথ ধরেই উন্মেষ ঘটেছিল বাঙালির স্বাধিকার চেতনার। সেই আন্দোলনের সফল পরিণতি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন। বাঙালির এর চেয়ে বড় কোন অর্জন নেই। ভাষার জন্য বাঙালির এই আত্মদানের দিনটিকে ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। বাঙালির সঙ্গে সারা বিশ্ববাসী আজ দিনটি পালন করবে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও গৌরব বুকে নিয়ে। আজ সব বিভ্রান্তি দূর করে সঠিক পথটি দেখিয়ে দেবে অমর একুশে। সেই অবিনাশী চেতনায় নতুন করে উদ্ভাসিত হওয়ার দিন। নিজেকে ফিরে পাওয়ার শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। সমাজের সকল অন্যায় অসাম্য ধর্মান্ধতা সা¤প্রদায়িকতা রুখে দিয়ে শহীদদের স্বপ্নের দেশ গড়ার শপথ নেয়ার দিন। আজ সর্বত্রই বাজবে সেই বেদনা সঙ্গীত: আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি…। রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হবে শোক। ভাষা শহীদদের স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। একই সঙ্গে ওড়ানো হবে কালো পতাকা। ভোর থেকে সারা দিন কেউ মালা হাতে, কেউ পুষ্পস্তবক নিয়ে এগিয়ে যাবেন শহীদ মিনারের দিকে। থাকবে কালো ব্যানার, কালো ব্যাজ। নগ্ন পায়ে উঠবেন শহীদ মিনারের বেদিতে। কণ্ঠে থাকবে সেই চিরচেনা গান ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…।’ আজ সরকারি ছুটির দিন। ঢাকার মতো দেশের সর্বত্রই আজ সকালে প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হবে শহীদদের স্মৃতির প্রতি।
রাষ্ট্রপতির বাণী : মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, আমাদের স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অমর একুশের অবিনাশী চেতনাই যুগিয়েছে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস।
তিনি বলেন, ফেব্রæয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং সে ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় বাঙালির চিরকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ২১ ফেব্রæয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। স্মৃতিবিজড়িত এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ে জীবন উৎসর্গকারী ভাষা শহীদ রফিক, সালাম, বরকত, জববার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদদের। আমি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ উপলক্ষে বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগণ ও জাতিগোষ্ঠীকে জানাই আন্তরিক শুভে”ছা ও অভিনন্দন।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী : মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অস¤প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যব¯’া গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের এ দিনে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণোৎসর্গ করেছিলেন আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, রফিকউদ্দিন আহমদ, শফিউর রহমানসহ আরো অনেকে। আমি বাংলাসহ বিশ্বের সকল ভাষা-শহীদগণের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। সেই সঙ্গে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল ভাষাসৈনিকদের, যাঁদের সর্বো”চ আত্মত্যাগ এবং সংগ্রামের বিনিময়ে আমাদের মা, মাটি ও মানুষের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।
অমর একুশের কর্মসূচী : মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ উপলক্ষে সারা দেশেই রয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। ¯’ানীয়ভাবে নির্মিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন সর্বস্তরের জনগণ। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। ভাষা আন্দোলনের ৭৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হবে আজ। থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছায়ানটের শিল্পীরা স্মৃতিকথা, একক ও সম্মেলক গানের মধ্য দিয়ে স্মরণ করবে ভাষা শহীদদের। জাতীয় জাদুঘর ‘বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রভাষা ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। শিল্পকলা একাডেমি ৫দিনব্যাপী একুশের উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটিকে স্মরণ করবে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও গ্রহণ করা হয়েছে পৃথক কর্মসূচী।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ