গাড়িতে সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা নিয়ে একটি জমি কেনার জন্য ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন ইসরাত ফ্যাশনের এমডি জাকির হোসেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ওঁত পেতে থাকা ডাকাতদের খপ্পরে পড়েন তিনি। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এই কৌশলে আরো কয়েকটি ডাকাতি করে চক্রটি। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা ওই টাকা দিয়ে একাধিক গাড়ি, জমি ও মোটরসাইকেল কেনে। ডাকাতির টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয় সেজন্য তাদের এই অভিনব পদক্ষেপ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গত বছরের ৯ অক্টোবর ঘটা চাঞ্চল্যকর এক ডাকাতির ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন ডাকাতির টাকা দিয়ে কেনা একটি মাইক্রোবাস, তিনটি গাড়ি এবং একটি মোটরসাইকেল। সাড়ে ৩৬ লাখ হাতানোর ঘটনায় নগদ উদ্ধার হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। গ্রেপ্তাররা হলেন- আবুল কাশেম ওরফে জাহিদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। গত রবিবার থেকে টানা অভিযানে রাজধানীর ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা এবং পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনাল টিম। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত বছরের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের রূপসার একটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন ইসরাত ফ্যাশনের এমডি জাকির হোসেন। গাড়িতে ছিল ৩ লাখ টাকা। আরো ২৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেন যমুনা ব্যাংকের উপশাখা থেকে। যৌথভাবে একটি জমি কেনার জন্য মোট সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ওঁত পেতে থাকা ডাকাতদের খপ্পরে পড়েন তিনি। গাড়িতে থাকা ভাগ্নেসহ ব্যবসায়ী জাকিরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। হাত-পা বেঁধে তাদের পূর্বাচলে ফেলে চলে যায় ডাকাত দল। পরে জাকির হোসেন ডেমরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর ডাকাত দলের সন্ধানে নামে ডিবি। এরই ধারাবাহিকতায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, ধরা পড়ার ভয়ে ডাকাত দল ডাকাতির টাকা গাড়ি ও জমি কেনায় ইনভেস্ট করে। যেন সেই টাকা ফেরত দিতে না হয় বা নষ্ট না হয়। পরে ডাকাতির টাকায় কেনা গাড়ি ব্যবহার করে আবার তারা ডাকাতিতে নামে। অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তাদের দুজনের নেতৃত্বে একটি ডাকাত দল দীর্ঘ কয়েক বছর দরে ডাকাতি পেশায় জড়িত। তারা ধরা পড়ার ভয়ে ডাকাতির টাকা নষ্ট বা বণ্টন না করে ইনভেস্ট করতো। তারা তিনটি গাড়ি কিনেছে, একটি মোটরসাইকেল কিনেছে। ডিবি প্রধান বলেন, তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস এবং পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানা এলাকা থেকে ডাকাতির লুণ্ঠিত টাকায় কেনা একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি প্রাইভেটকার, একটি মাইক্রোবাস এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার মোস্তাফিজের নামে ৫টি ও কাশেমের নামে ৩টি মামলা রয়েছে। এসব ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় একাধিকবার তারা জেল খেটেছে।
ডিবি ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, ডাকাতিকালে ব্যবসায়ী জাকিরকে কবজা করে সব টাকা লুণ্ঠনের পর হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে ছবি তোলে ডাকাতরা। কাউকে না জানানোর হুমকি দিয়ে বলে ‘তুমি যে অস্ত্রবাজ এই ছবি প্রকাশ করবো। তুমিই হবে তখন ডাকাত অস্ত্রবাজ। বাড়াবাড়ি করলে তোদের অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেবো।’ এর আগেও একটি চক্র এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভারের ওপর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সেখান থেকেও আমরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। এরকম ঘটনায় প্রথম কাজ হচ্ছে ডিবি পুলিশকে অবহিত করার আগে থানায় অবহিত করা, জিডি বা মামলা করা। তাহলে পুলিশের পক্ষে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতিতে জড়িতদের দ্রæত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।