৮ জনকে আসামী করে মামলার চার্জশিট
মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে
সব কিছু চলছে আগের মতই। পাঁচ তলা ভবনের নীচ তলায় দুইটি জেনারেল স্টোর। দোতালায় দুইটি ব্যাংক। তিন তলা থেকে উপরের তলাগুলোতে ভাড়া দেওয়া হয়নি। খালি পড়ে আছে। এটি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ৬৪, নন্দকুমার দত্ত রোডের ওয়াহেদ ম্যানশন। এই ভবনের দোতালায় একটি কেমিকেল গোডাউনে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি রাত সাড়ে ৮ টার দিকে প্রচন্ড বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। ঘটনার পর ৭১ টি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যায়। এরপরই পুরান ঢাকার আবাসিক ভবন থেকে কেমিকেল গোডাউন উচ্ছেদের ঘোষণা দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। মাত্র ৩৩ দিন অভিযান পরিচালনা করে ১৭০ টি কেমিকেল গোডাউন সিলগালা করা হয়। এরপর অদৃশ্য কারণে সেই অভিযান থেমে যায়। আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এখনো পুরান ঢাকায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত আড়াই হাজার কেমিকেল গোডাউনের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। যে কোনো সময়ে নিমতলী ট্রাজেডি বা চ‚ড়িহাট্টা ট্রাজেডির মতো আরো একটি ট্রাজেডি ঘটে যেতে পারে। প্রতি বছর এই ২০ ফেব্রæয়ারি দিনটি এলে শুধু নিহতের স্মরণে শোকসভা হয়। আর কিছুই হয় না।
চুড়িহাট্টার সেই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনে নিহত জুম্মনের ছেলে আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ওই বছরের ২১ ফেব্রæয়ারি মামলা করেন। মামলায় ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে হাসান ও সোহেলের নাম উল্লে¬খ করেন। অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি দীর্ঘ তিন বছর তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় ভবনের মালিকের দুই ছেলে হাসান ও সোহেল এবং কেমিকেল গোডাউন পার্ল ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইমতিয়াজসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ঢাকার নি¤œ আদালত শুনানি শেষে মামলার চার্জশিট আদালত গ্রহণ করেছে। এখন এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
এদিকে, পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, চকবাজার, লালবাগ, ইসলামপুর, চানখারপুলসহ আশপাশের এলাকার আবাসিক ভবনে এখনও রয়েছে প্রায় ৫ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন। বিস্ফোরক অ্যাক্ট-১৮৮৪ এবং সিলিন্ডার বিধিমালা-১৯৯১ তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠছে এসব অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন। এসব গোডাউনের অধিকাংশেরই বৈধ কাগজপত্র ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নেই। গোডাউনের ৯৯ ভাগই অবৈধ। মাত্র এক ভাগ গোডাউনের অনুমোদন আছে। আবাসিক ভবন, মার্কেট ও জনবহুল বিপনী বিতানে গোডাউন স্থাপন করা হচ্ছে। বিস্ফোরক অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশের সামনেই কেমিকেলগুলো গোডাউনে মজুদ করা হচ্ছে। অনিরাপদ অবস্থায় এসব কেমিকেল গোডাউন থেকে ট্রাক, পিকআপ ও ঠেলাগাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়।
কেমিকেল সংশ্লিষ্ট বড় ধরনের দুর্ঘটনার পর কিছুদিন সিটি কর্পোরেশন আরো কয়েকটি সংস্থার সহায়তায় চালায় অবৈধ কেমিকেল গোডাউন উচ্ছেদ অভিযান। একটা পর্যায়ে কিছুদিন পর অভিযান নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। হাজার হাজার অবৈধ কেমিকেলের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য করলেও এদেরকে গ্রেফতার তো দূরের কথা, মামলা পর্যন্ত দায়ের হয় না।