নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবকাঠামোসহ হাসপাতাল সম্পন্ন করা হলেও তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ চালু হয়নি। মাত্র বহিঃবিভাগে দুই জন চিকিৎসক নিয়মিত এই উপজেলার আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই হাসপাতালটিতে ২৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা। এরমধ্যে কনসালটেন্ট, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, শিশু, কার্ডিওলজি, এনেসথেসিওলজি, চক্ষু ও চর্মরোগসহ ১০ জন বিশেষজ্ঞের পদ রয়েছে। এছাড়া ১৭ জন মেডিক্যাল অফিসার, ৩১ জন নার্স, টেকনোলজিস্টসহ ৭৩ জন তৃতীয় শ্রেণী এবং ২৮ জন চতুর্থ শ্রেণীর পদ সেখানে সৃষ্টি করা হয়েছে। তিন বছরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা মন্ত্রণালয় থেকে শূণ্য পদে নিয়োগ দিতে পারেনি। এই উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ নিরাপদ ডেলিভারি, সিজার, অপারেশনসহ সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। আশপাশে গড়ে ওঠা ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন অনেকে। যে পরীক্ষা বা চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, সেটাও করিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমন অভিযোগও রোগীরা করছেন।
এদিকে জনবল না থাকায় হাসপাতাল ভবনে রোগী নয়, সাপের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। এই চিত্র দেখে বোঝা যায় মফস্বলে চিকিৎসা সেবার করুণ চিত্র। এ কারণে সাধারণ চিকিৎসার জন্য জেলা-উপজেলার মানুষ ঢাকায় ভিড় করছেন। যে চিকিৎসা উপজেলায় করা সম্ভব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাই অন্যতম কারণ। তারা ঢাকার বাইরে থেকে জনবল নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রস্তাব আসলেও গুরুত্ব দেয় না। এমন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, প্রতি ফাইলের সঙ্গে উৎকোচের প্যাকেট না দিলে ফাইল নড়ে না। অথচ এই কাজটি দ্রæত করলে ওই এলাকার দুই লক্ষাধিক মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হতো না। নলডাঙ্গা উপজেলার মতো সারাদেশে স্বাস্থ্য সেবার করুণ অবস্থা বিরাজ করছে।
নলডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার সোবহান আলী বলেন, জনবল না থাকায় ৫০ শয্যে হাসপাতালটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম চালু করা হয়নি। দুই চিকিসক দিয়ে কষ্টে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই দুই চিকিৎসক পালাক্রমে জেলা সদর হাসপাতাল থেকে এসে উক্ত হাসপাতালে বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, কার্যক্রম চালু না থাকায় হাসপাতালটি এখন ধুলো আর সাপের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। জনবল নিয়োগসহ পুরোপুরি স্বাস্থ্য সেবা চালুর নিবেদন নিয়ে তিনি নিজেও চেষ্টা করেছেন। তবে ফল আসেনি। হাসপাতালটির কার্যক্রম চালুর জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দাবি করেছেন।
নাটোর সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, ভবন অবকাঠামো নির্মাণ হলেও নলডাঙ্গা উপজেলায় ৫০ শয্যের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হিসেবে জনবলের অনুমোদন এখনো পায়নি। ফলে পুরোপুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। জনবল নিয়োগসহ হাসপাতালটি চালু করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।