মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে চলমান সংঘর্ষে ওপার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও গোলাগুলির বিকট শব্দে স্থানীয়দের মাঝে নতুন করে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। এর আগে টানা দুই-তিন সপ্তাহে জুড়ে ঘুমধুমের তুমব্রæ, উখিয়ার পালংখালি ও টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্ত জুড়ে উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এদিকে ঘুমঘুম সীমান্তে দেশটির সেনাবাহিনী আবারও বিমান হামলা চালাতে বলে আলোচনা হচ্ছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শনিবার সকালেও মর্টারশেলের বিকট শব্দ ও গোলাগুলির ফায়ারের আওয়াজে এপার কেঁপে উঠেছে। তবে এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী মানুষের নিরাপত্তাসহ তাদের দৈনন্দিন কাজে প্রভাব পড়েছে। হোয়াইক্যংয়ের স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, সীমান্ত বসবাস করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। মিয়ানমার ওপারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলা সংঘর্ষ থেকে এর আগেও ঘুমধুমে হতাহত পর পালংখালি ও হোয়াইক্যংয়ের সীমান্তের বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই আমরা এখনো কোন ভাবে শঙ্কা মুক্ত নয়। কারন দিনের পর দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
শাহপরীর দ্বীপের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, সীমান্তবর্তী মানুষ সাগরে, নাফনদী, চিংড়িঘের মাছ ধরে ও লবণ খেতের চাষাবাদ করে সংসার চালায়। মিয়ানমারের ওপারে সংঘাতের কারনে ভয়ে ও আতঙ্কে অনেকে তাদের কাজে যেতে পারছেন না। গত তিন দিন ধরে ওপার থেকে ফায়ারের বিকট শব্দ গুলো এপারে শোনা যাচ্ছে। রাতের বেলায় যেসব ফায়ারে শব্দগুলো হয় সেগুলো ভুমিকম্পের মত। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা থাকলেও বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সর্তক অবস্থানে আছেন।
জানা গেছে, রাখাইনে তাদের অভ্যন্তরে মংডু শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা ও ফাদংচা, নাফপুরা এলাকায় এখনও সংঘর্ষ হচ্ছে। এর আগে ঘুমধুমের তুমব্রæ ও উখিয়ার পালংখালি, টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে রাখাইনে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ক্যাম্পসহ সীমান্ত চৌকি আরকান আর্মি (এএ) দখল করে রাখছে। তবে মংডু শহরের আশাপাশের অনেক রোহিঙ্গা তাদের নিজ গ্রাম ছেড়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে অবস্থান করছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, যেহেতু সীমান্তের ওপারে তাদের অভ্যন্তরে সংঘাত চলমান থাকায় এপারে যেমন প্রভাব পড়ছে। তারমধ্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা রয়ে গেছে। এরআগে ২০১৭ সালে রাখাইনে একই ঘটনার কারনে সেদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফে ঢুকে পড়েছিল। মাঝখানে সীমান্ত পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি বেশ খারাপ।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে দেশটিতে দুটি গ্রæপের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি হচ্ছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করাসহ সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে বিজিবির সদস্যরা।
এদিকে ঘুমঘুম সীমান্তে লোকজনের মধ্যে এক ‘অজানা চাপা আতঙ্ক’ বিরাজ করতে দেখা গেছে। তাদের আশঙ্কা, সীমান্তের ওপারে আবারও বিমান হামলার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হবে এবং বিদ্রোহীদের দখল করা ঘাঁটিগুলো সে দেশের সেনাবাহিনী পুনরায় উদ্ধার করার চেষ্টা করবেন। গতকাল এলাকা ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা এই আতঙ্কের কথা জানান। যারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে কাছে-দূরের আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন শান্ত পরিস্থিতিতে তারা ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো জানান, ক্যাম্প পুনর্দখল কিংবা আরাকান আর্মির ওপর আক্রমণ করার জন্য স্থলপথে এখানে আসার সুযোগ নেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর। তারা একমাত্র বিমান হামলা চালাতে পারে সেই কারণে বিমান হামলার আতঙ্ক পেয়ে বসছে।