spot_img

‘চাঁদা দে, নইলে গুলি’

১১ ফেব্রæয়ারি, রবিবার। সময় তখন রাত ১০ টা। রাজধানীর পশ্চিম মেরুল বাড্ডার শিরিন টাওয়ারের গলিতে ম-৮২/১, ফুড কোট নামে একটি ফাস্ট ফুডের দোকানের সামনে দ্রæত বেগে ৭/৮ টি মোটরসাইকেল থেমে যায়। মোটরসাইকেল থেকে ১০/১২ জন নেমে ফাস্ট ফুডের দোকানে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে এক যুবকের হাতে পিস্তল। দুই জনের হাতে ধারালো ছুরি। এরই মধ্যে পিস্তল হাতে থাকা যুবক দোকানের মালিক রায়হানের দিকে এগিয়ে যায়। চেঁচিয়ে বলছে, ‘তোকে বলেছি যে ভাই ফোন দিয়েছিল। ১০ লাখ টাকা চেয়েছে। তুই চাঁদা দিবি, না হলে গুলি কইর‌্যা খুলি উইড়া দিমু।’ এসময় দোকানের ম্যানেজার সাইফুল হাওলাদার এগিয়ে গেলে, পিস্তল হাতের ওই যুবক তাকে একাধারে চড়-থাপ্পর মারতে থাকে। এ অবস্থায় অন্য যুবকরা ফাস্ট ফুডের দোকানের টেবিল-চেয়ার তুলে দোকানের ফ্রিজ, ডিপ ফ্রিজ, খাবার রাখার শোকেজ ও ক্যাশ কাউন্টারে ছুঁড়ে মারে। ৪/৫ মিনিটের মধ্যে দোকানের মূল্যবান আসবাবপত্র ভাংচুর ও ফাস্ট ফুডের আইটেম তছনছ করে চলে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায়, মেহেদী ভাইয়ের চাঁদা দিবি না, তোর লাশ পড়ে থাকবে।’
এই ঘটনার তিন দিন আগে ৮ ফেব্রæয়ারি বৃহস্পতিবার দিনে দুপুরে বাড্ডা লিংক রোডে স্যাম নামে একটি ইন্টারনেট প্রভাইডার প্রতিষ্ঠানে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা পরপর ৪ রাউন্ড গুলি করে মোটরসাইকেলযোগে বীরদর্পে চলে যায়। ঘটনার পর বাড্ডা থানার পুলিশের একটি টিম পরিদর্শন করে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে গুলি করার সত্যতা পায়। এরপরই পুলিশ বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা করে।
অপরদিকে, পশ্চিম মেরুল বাড্ডার ঘটনায় বাড্ডা থানার এএসআই মোঃ নুরুজ্জামান বাদী হয়ে আমেরিকায় আত্মগোপনকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদী ওরফে কলিংসের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর ক্যাডার বাহিনীর ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এরা হলেন দুলাল, সজল, কালি সোহেল, সাইফুল, ইমরান, ময়লা সাঈদ, অর্ণব সাঈদ, রবিউল, পলক, বাঁধন, নজরুল, রুবেল, তুষার, রাজীব, মিনহাজ ও ছোটন। রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রন করে আমেরিকায় আত্মগোপনকারী মেহেদী ও সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল।
সম্প্রতি পুলিশের এক গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, গুলশান এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রনকারী মেহেদির সঙ্গে সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল এক হয়ে গেছে। গুলশান-১ এর গুলশান শপিং কমপ্লেক্স ঘিরে চঞ্চল-মেহেদি গ্রæপের ক্যাডার বাহিনীর প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছে। এই গ্রæপের সেকেন্ড ইন কমান্ড দুলাল, বিপু, বাবুল, অলি, মানিক, মান্নান, ময়লা সাঈদ, রিয়াদ, রুবেল ও তপন সক্রিয়।
বাড্ডা এলাকার পাশেই রামপুরা-খিলগাঁও-শাজাহানপুর এলাকার চাঁদাবাজি দুবাইয়ে আত্মগোপনকারী তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসান নিয়ন্ত্রন করে। ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাতে শাজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয় জিসানের পরিকল্পনায়। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গত বছরের ৫ জুন ৩৩ জনকে আসামী করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। চার্জশিটভ‚ক্ত আসামীরা সবাই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের পদধারী নেতা। চার্জশিট দেয়ার পর থেকে টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলির কাছে ফোন করে হুমকি দিতে থাকে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান। ডলি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর। মামলা তুলে নেয়া ও চাঁদা চেয়ে সন্ত্রাসীরা হুমকি দেয়। এসব ঘটনায় ফারহানা ইসলাম ডলি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে এখন পর্যন্ত ১১ টি জিডি করেছেন।
এ ব্যাপারে ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, স্বামী হত্যার পরিকল্পনাকারী মুসার গডফাদার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান এখনও তৎপর। চার্জশিটভ‚ক্ত ৩৩ জন আসামীর মধ্যে অনেকেই জামিনে বের হয়ে ফের পরিবারসহ আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তারা চাঁদাবাজ গ্রæপ। এই চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওই সন্ত্রাসী গ্রæপ আমার স্বামীকে হত্যা করেছে।
গত বছরের ১১ মে রমনা থানায় এক ব্যক্তি জিডি করেন। জিডির একস্থানে বলা হয়েছে, ‘সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী আমার কাছে দুইটি ফ্ল্যাট চেয়েছে। এরপর থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল করে সুব্রত বাইন পরিচয় দিয়ে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। আমি যদি সুব্রত বাইনের পাঠানো ব্যক্তির কাছে ফ্ল্যাট না লিখে দিই, তাহলে সুব্রত বাইন আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে।’ তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর আরেক অন্যতম সুব্রত বাইন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাটে অবস্থান করে রাজধানীর মগবাজার, মৌচাক ও মালিবাগ এলাকা নিয়ন্ত্রন করছে।
মিরপুর এলাকায় শাহাদত বাহিনী দীর্ঘ দিন পর আবারও নড়েচড়ে বসেছে। দুবাই থেকে শাহাদত মিরপুর এলাকায় তার ক্যাডার বাহিনী পরিচালনা করছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যেই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীরা কে কোথায় আছে খোঁজ নেয়া শুরু হয়েছে। অনেকে জেলে থাকা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেস্টা করছে। তবে পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে অনেকগুলো উঠতি সন্ত্রাসী গ্রæপ। এরাই বিদেশে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে এলাকায় ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে। এসব উঠতি মাস্তান বাহিনীর একটি তালিকাও করা হচ্ছে।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। যেসব সন্ত্রাসীর নামে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে- সেসব ঘটনা তদন্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে র‌্যাব।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ