রাজধানীতে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে তিন মাস কারাগারে কাটানোর পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকার কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ফুল ছিটিয়ে তাদের বরণ করে নেন। পরে সেখান থেকে সরাসরি মির্জা ফখরুল বিএনপির গুলশান অফিসে যান।সেখানে ভাচর্‚য়াল মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা কথা বলেন।
এদিকে মুক্তি পেয়েই কারাফটকের সামনে হুড খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে হাত তুলে নেতা-কর্মীদের অভিবাদন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন,বাংলাদেশের জনগণ সব সময় গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে। গণতন্ত্র ফেরানো চলমান আন্দোলন বিজয় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ইনআশাল্লাহ এই সংগ্রামে জনগন জয়ী হবে। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির একপক্ষীয় নির্বাচন করে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বিএনপির কোনো ক্ষতি হয়নি, আন্দোলনের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমরা ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন চালিয়ে যাব। বিকাল পৌনে ৪টায় কারাগার থেকে প্রথমে মির্জা ফখরুল, এরপরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বের হয়ে আসেন।
কারাগার গেটে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ওরা (সরকার) রাস্ট্র শক্তিকে কবজা করে ক্ষমতা দখল করেছে, বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে প্রত্যাখান করেছে। তারা নির্বাচনে নৈতিকভাবে জনগণের কাছে পরাজিত হয়েছে। আমরা বলতে চাই, গণতন্ত্রের আন্দোলন অটুট থাকবে। যদি দেশে গণতন্ত্র ফেরত না আসবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আসবে ততদিন এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।এসময় কারাগারের প্রধান ফটকে বিএনপির নেতাদের মধ্যে তাইফুল ইসলাম টিপু,নিপুণ রায় চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন আজাদ, রাজবাড়ির সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম প্রমুখ।
উল্লেখ্য,দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে সহিংসতা,হত্যাকান্ড এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।সংঘর্ষের মধ্যে পÐ হওয়া সমাবেশ থেকেই পরদিন সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। আর আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ২ নভেম্বর রাতে গুলশানের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ হত্যার মামলায় রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১টি এবং খসরুর বিরুদ্ধে দশটি মামলা হয়। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনাটি ছাড়া সব মামলায় তারা বিভিন্ন সময়ে জামিন পেয়ে যান। কিন্তু এক মামলায় আটকে থাকায় তাদের মুক্তি মিলছিল না। শেষ পর্যন্ত ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদের গত বুধবার বিএনপির এ দুই সিনিয়র নেতার নেতার জামিন মঞ্জুর করেন। সব মামলা জামিন হয়ে যাওয়ায় তাদের মুক্তির বাধা কাটে।
বিএনপি নেতা এ্যানি মুক্তি পেয়েছেন
জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। গতকাল দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ই অক্টোবর গভীর রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।