spot_img

মেলায় বসন্তের আবহ

ঋতুরাজ বসন্ত এলে যেমন রাঙিয়ে ওঠে প্রকৃতি, ঠিক তেমনি ফাগুনের ছোঁয়া মন-মননেও। আর এর সঙ্গে যখন যুক্ত হয় ভালোবাসার আবেগ, অনুভ‚তি তখন তার ঢেউ লাগে অমর একুশে বইমেলাতেও। বাসন্তী রঙে সেজে মেলায় আসা তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গোটা চত্বর। আগুন ছড়ানো ফাগুন ঘিরে কবি, লেখকদের পাশাপাশি প্রস্তুতি থাকে প্রকাশকদেরও। গতকাল মঙ্গলবার তেরোতম দিনে বইমেলা চত্বরে বসন্তের ছোঁয়া দেখা গেছে। অনেক বইপ্রেমী, পাঠক মেলায় এসেছেন বাসন্তী সাজে। স্টলে স্টলেও দেখা গেছে তরুণ-তরুণীদের দারুণ ভিড়।
প্রকাশকরা বললেন, পহেলা ফাগুন বসন্ত ঋতুর প্রথমদিন। সেই সঙ্গে কয়েক দশক ধরে ভালোবাসার দিবস হিসেবেও পালিত হচ্ছে। বসন্ত আর ভালোবাসার সব রঙ এসে মেশে বইমেলা চত্বরে। ফলে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে মেলায়। এদিনে রোমান্টিক উপন্যাস বা কবিতার বইয়ের চাহিদা বেশি থাকে। তাছাড়া নতুন কবি বা লেখকরাও এদিনটিতে মেলায় তাদের নতুন বই হাজির করার চেষ্টা করে। এতে বেচাকেনাও বেড়ে যায়।
উৎস প্রকাশনীর কর্ণধার মোস্তফা সেলিম বলেন, মাসব্যাপী মেলার দুটো উৎসবের দিকে নজর থাকে। একটা পয়লা ফাগুন যেদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও পালন হয়। আরেকটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দুদিনে বইমেলায় পাঠক বইপ্রেমীদের ঢল নামে। বেচাবিক্রিও হয় অনেক বেশি। এই দিবস দুটি ঘিরে কিছু বিশেষ বইয়ের পরিকল্পনা থাকে। আশা করছি এবার অনেক বেশি সাড়া পাবো।

ফাগুনের সাজে মেলায় দলবেঁধে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নওশিন, কুয়াশা, ইয়ামি, রোজ ইত্তেফাককে বললেন, পহেলা ফাগুন তো বিশেষ দিন। যেদিনে প্রিয়জনদের সঙ্গে আবেগ, ভালোবাসা ভাগাভাগি করি, বিভিন্ন উপহার বিনিময় করি। আমাদের কাছে বই-ই শ্রেষ্ঠ উপহার। তাই বসন্তের প্রথমদিন প্রিয়জনদের উপহার দেয়ার জন্য বই সংগ্রহ করতে এসেছি। রোমান্টিক কবিতা বা উপন্যাসই পছন্দের তালিকায় প্রথম।
কয়েক বছর ধরে মেলার জন্য কবিতা আর উপন্যাসের বই লিখছেন রনজিৎ সরকার। জানতে চাইলে বললেন, আগের মতো এ সময়ের তরুণরাও ভালোবাসার মানুষ বা প্রিয়জনকে রোমান্টিক কবিতা আর উপন্যাস উপহার দিতে বেশি পছন্দ করে। তাদের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়, এমন উপন্যাস আর অনুভূতিকে নাড়া দেয়া কবিতার বই-ই খোঁজেন। তরুণ-তরুণীদের আকর্ষণ করে এমন বই লেখার চেষ্টা থাকে কবি বা লেখকদেরও। কারণ, লেখার মাধ্যমে এ সময়ে তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হওয়াটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
মেলার বিভিন্ন স্টলে কর্মরত বিক্রয়কর্মী মৌমিতা, কোয়েল, কুয়াশা, কাকলির সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, আগের দিনেই পহেলা ফাগুনের ছোঁয়া পাওয়া গেছে মেলায়। পাঠক-বইপ্রেমীরা বাসন্তী রঙে সেজে দলবেঁধে মেলায় হাজির হয়েছেন। তারা স্টলে স্টলে ভিড়ও করেছেন। তাদের পছন্দের তালিকায় আজ (গতকাল) দেখা গেল উপন্যাস, কবিতা, ফিকশনধর্মী বইগুলো। এসব বই বিক্রিও হয়েছে বেশ। আশা করছি, পহেলা ফাগুনে বেচাবিক্রি আরও বাড়বে।

মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’্ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমাদ মোস্তফা কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হরিশংকর জলদাস এবং ফারজানা সিদ্দিকা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
প্রাবন্ধিক বলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ যেভাবে তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের লেখকদের কাছে এক অনিবার্য প্রসঙ্গ হয়ে উঠলেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। ১৯৪০-এর দশকে পূর্ব বাংলার ভিন্নতর এক কণ্ঠস্বর নির্মাণের প্রয়াস যাঁরা নিয়েছিলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
আলোচকরা বলেন, জনজীবনের ভাষাকেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তাঁর সাহিত্যের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সমাজের ক্ষমতা ও ক্ষমতা-কাঠামোর সঙ্গে জনগণের মনোজগতের পারস্পরিক সম্পর্ক বা দ্ব›দ্বটি তাঁর সাহিত্যে বিশেষ রূপ লাভ করেছে।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সাহিত্যের ভেতর দিয়ে জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরার নিপুণ কারিগর সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্। তাঁর সাহিত্যে তিনি সমকালীন জনগোষ্ঠীর অনুভূতির কাঠামোকে ধারণ করেছেন। ফলে, কেবল আমাদের সময়েই নয় ভবিষ্যতেও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ও তাঁর সাহিত্যকর্ম অনিবার্য এবং প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন নাট্যকার ও অনুবাদক খায়রুল আলম সবুজ, গবেষক আফরোজা পারভীন, কবি শিহাব শাহরিয়ার এবং শিশুসাহিত্যিক কামাল হোসাইন।
কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদ হায়দার, হেনরী স্বপন, শিহাব শাহরিয়ার, মতিন রায়হান, জুনান নাশিত, টিমুনী খান রিনো, সাকিরা পারভীন এবং মুঃ আহসান উল্লাহ ইমাম খান তমাল।

মেলায় নতুন বই
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের তথ্য মতে, মেলায় নতুন বই এসেছে ১১০টি। এর মধ্যে গল্প ৭টি, উপন্যাস ২৪টি, প্রবন্ধ ৫টি, কবিতা ২৯টি, গবেষণা ৩টি, শিশু সাহিত্য ২টি, জীবনী ১টি, রচনাবলী ২টি, মুক্তিযুদ্ধ ৪টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান ৩টি, ভ্রমণ ২টি, ইতিহাস ১টি, স্বাস্থ্য ১টি, ধাঁধা ২টি, ধর্মীয় ৬টি, অনুবাদ ৮টি, সাইন্স ফিকশন ২টি, অন্যান্য ৩টি।
আগামী প্রকাশনী এনেছে হুমায়ুন আজাদের ‘রবীন্দ্রনাথ’, অনুপম এনেছে কানাই চক্রবর্তীর ‘ইতিহাসে নেই’, কথাপ্রকাশ এনেছে গৌতম রায়ের ‘বাঙালি ও বাংলাদেশের মন’, ঐতিহ্য এনেছে বেলাল চৌধুরী অনুদিত গেব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এর ‘মৃত্যুর কড়ানাড়া’, ইত্যাদি এনেছে কুমার প্রীতিশ বলের ‘মুক্তিযুদ্ধের ৮ কিশোর উপন্যাস’ নয়নজুলি এনেছে এম এ মোমেনের ‘কালোমানুষ নেলসন ম্যান্ডেলা’, বাংলা একাডেমী এনেছে ‘রফিকুল ইসলামের আবুল মনসুর আহমেদের রচনাবলী চতুর্থ খন্ড’ উল্লেখযোগ্য।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ