কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের ভেতরে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ, গুলি ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এসব এলাকার শত শত রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় টেকনাফ ও উখিয়াসংলগ্ন নাফ নদীতে নৌকা নিয়ে ভাসছেন। দিনের বেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুপ্রবেশ সম্ভব হচ্ছে না। তাই রাতে নজরদারি এড়িয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছেন তারা। এদিকে কক্সবাজারের উখিয়ার খাল থেকে গায়ে জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট পরিহিত ও ৯৯ রাউন্ড রাইফেলের গুলি, দু’টি ম্যাগজিন ও হাতে গøাভসসহ ভাসমান অবস্থায় একটি অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল রবিবার বিকাল ৫টার দিকে উখিয়ার কাস্টমস বালুখালির খাল থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শামীম হোসাইন বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেলাম উখিয়ার বালুখালি কাস্টমস ঘাটের খালে একটি মরদেহ ভাসতেছে। পরে আমিসহ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর মরদেহটি উদ্ধার করি। পরবর্তীতে তার গায়ে পরিহিত একটি জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট, হাতে গøাভস ৯৯ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ও দু’টি ম্যাগজিন পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে নিহত হওয়ার পর পার্শ্ববর্তী নাফনদী পেরিয়ে বালুখালি খালে মধ্যে লাশটি জোয়ারের পানিতে এখানে ঢুকে পড়ে। তবে এ লাশের পরিচয় জানা যায়নি।
অপরদিকে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার আরকান রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ টানা কয়েক সপ্তাহ চলার পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে। অনেকেই নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। গতকাল ঘুমধুমের হিন্দু পাড়া ও টেকনাফের হোয়াইক্যং-দমদমিয়া এলাকার সীমান্তের ওপারে ঘন্টাখানেক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ঘুমধুমের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, গত শনিবার মিয়ানমারের ওপার থেকে অবিস্ফোরিত একটি মর্টারশেল এপারে তুমব্রæ এসে পড়েছে। এরপর রবিবারে তুমব্রæ হিন্দু পাড়ার ওপারে থেমে থেমে গোলাগুলির ফায়ারের শব্দ এপারে ভেসে আসলো। এর আগে গত দু সপ্তাহ জুড়ে ওপারে চলা সংঘাত থেকে এপারে গোলা পড়া ও হতাহতের ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদে সরে গিয়েছিল। পরে কিছুটা পরিবেশ শান্ত হলেও আবারো মর্টারশেল পড়ে। এতে নতুন করে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা গেছে।
এদিকে লম্ববিল, উনছিপ্রাংকানজড় পাড়া এলাকাসহ নাফ নদীতে ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান করছে কিছু রোহিঙ্গা। যেখানে ছোট শিশু ও বয়স্ক মানুষ আছে। তারা বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি বাঁশি দিলে তারা মিয়ানমারের সীমান্তে চলে যান। তারা মিয়ানমারের কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনা পাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। বিজিবি ও কোস্টগার্ড সূত্র মতে, নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গা নাগরিকবোঝাই ৪-৬টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সময় টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি ১০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে।
উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। শুনেছি বলিবাজার থেকে কিছু রোহিঙ্গা নদীতে ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান নিয়েছে সুযোগ বুঝে অনুপ্রবেশ করার জন্য। এর আগেও ২৩ জন রোহিঙ্গা অস্ত্র নিয়ে অনুপ্রবেশের সময় স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আমি তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা সজাগ আছি, কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।