দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের তিন মাসে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত দ্রæত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত অপরাধ বিষয়ক মাসিক সভায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসিদের এই নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
ডিএমপি সদর দপ্তরের একটি হিসাব অনুযায়ি, ২৮ অক্টোবর পল্টনে বিএনপির সমাবেশের দিন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত রাজধানীর ৫০ টি থানায় মোট ২৩৪ টি মামলা দায়ের হয়। এরমধ্যে ২৮ অক্টোবর পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় ঢাকার বিভিন্ন থানায় মামলা হয় ৩৬টি। এরপর নভেম্বরে ১৩৩টি এবং ডিসেম্বরে ৪১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে ৫ হাজার ৮৬৮ জনকে। মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ি কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলটির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের নেতা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
এই সময়ের মধ্যে সর্বাধিক মামলা হয় যাত্রাবাড়ী থানায় যার মামলার সংখ্যা ২৬। পল্টন থানায় ২২টি, রমনায় ১২টি, পল্লবীতে ১১টি, মিরপুরে ১১টি, মতিঝিলে ১০টি ও ডেমরা থানায় ৮টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সাতটি করে মামলা হয়েছে খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, শাহ আলী ও কাফরুল থানায়। ছয়টি করে মামলা শ্যামপুর, দারুসসালাম, হাতিরঝিল, ভাটারা ও ওয়ারী থানায়। পাঁচটি করে মামলা হয় মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা নগর, কদমতলী ও মুগদা থানায়। চারটি করে মামলা হয় ধানমন্ডি ও সবুজবাগে। তিনটি করে মামলা হয় চকবাজার, বনানী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, বাড্ডা, হাজারীবাগ, উত্তরা পূর্ব, ভাষানটেক, রামপুরা ও গেন্ডারিয়ায় থানায়। দুটি করে মামলা লালবাগ, বংশাল, উত্তরা পশ্চিম, খিলক্ষেত, শাহবাগ, রূপনগর ও নিউমার্কেট থানায়। একটি করে মামলার তথ্য পাওয়া গেছে আরও সাতটি থানায়।
মামলার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, হামলা, ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বেশির ভাগ মামলার বাদীও পুলিশ।
আদালত সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় বিএনপির ৩ হাজার ১৫৬ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও প্রায় ৩ হাজার জনকে।
মামলাগুলোর তদন্ত তদারক সূত্রে জানা গেছে, বেশিরভাগ মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। দ্রæত চার্জশিট দাখিল করা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিল থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, দ্রæত মামলার তদন্ত শেষ করার জন্য সিনিয়র কর্মকর্তাদের চাপ রয়েছে। আসা করা যাচ্ছেছ চলতি মাসের শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব হবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন উর রশিদ বলেন, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, পুলিশ হত্যা, ট্রেনে অগ্নিসংযোগ, বিচারপতির বাসভবনে হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত কাজ চলছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলার আসামীর নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সাক্ষীও নিয়েছেন। এসব মামলার তদন্ত দ্রæত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।