মিয়ানমার সীমান্তে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘাতে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের বার্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) যে ৩২৯ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়েই ফেরত পাঠানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আশ্রিতদের মধ্যে ১৪ জন গুপ্তচর ধরা পরার পর এমন আলোচনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আশ্রিতদের ফেরত নিতে জাহাজ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরা আসলেই বিজিপির সদস্য কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় যে ২৩ জনকে অস্ত্রসহ গ্রামবাসী আটক করে পুলিশে দিয়েছে তাদের মধ্যে ১৭ জনই উখিয়ার একটি ক্যাম্পের বাসিন্দা। তাদের কাছে আইডি কার্ডও পাওয়া গেছে। তারা কীভাবে ক্যাম্প থেকে ওপারে গেল সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, ‘শুধু যুদ্ধ পরিস্থিতি নয়, যে কোন পরিস্থিতিতে কোন বিদেশী নাগরিক দেশের মধ্যে ঢুকে পড়লে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া জরুরী। এটা বিশ্বব্যাপী প্যাকটিস। আর মিয়ানমারে যেহেতু সংঘাত চলছে, ফলে সেখানে থেকে কারা এসেছে সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করে ফেরত পাঠাতে হবে। এরা কী আসলেই বিজিপি সদস্য, নাকি কোন বিদ্রোহী গ্রæপের সদস্য সেটাও দেখতে হবে। সবকিছু নিশ্চিত হয়েই তাদের ফেরত দিতে হবে। এটা একটা সাধারণ নিয়ম।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমার তাড়াহুড়ো করলেও আমাদের তাড়াহুড়ো করা যাবে না। তারা কী আদৌ বর্ডার গার্ডের সদস্য কিনা এটা নিশ্চিত হতে হবে। আবার এদের মধ্যে কেউ গুপ্তচরও থাকতে পারে। এগুলো বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এদের মধ্যে এমন কেউ ঢুকে পড়তে পারে, যারা বাংলাদেশে ঢুকে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়ে বিদেশে অপপ্রচার করতে পারে। কেউ কোন সন্ত্রাসী দলের সদস্য হলে সেটা আমাদের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের প্রশ্ন হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আশ্রিতদের মধ্যে কেউ মানবাধিকার লংঙ্ঘন বা যুদ্ধপরাধের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কিনা সেটাও নিশ্চিত হতে হবে। তা না হলে তিনি ফিরে গিয়ে একই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
২৩ জনের ১৭ জনই ক্যাম্পের বাসিন্দা : এদিকে দুই দিন আগে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় যে ২৩ জনকে অস্ত্রসহ আটকের পর এলাকাবাসী পুলিশে দিয়েছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এদের ১৭ জন উখিয়ার একটি ক্যাম্পের বাসিন্দা। তাদের কাছে ক্যাম্পের পরিচয়পত্রও (এফসিএন কার্ড) রয়েছে। অন্য ৬ জনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তারা কীভাবে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে মিয়ানমারে গেল সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তারা কী কোন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ২৩ জনকে আটকের পর গত শুক্রবার দুপুরে বালুখালি বিওপির নায়ক সুবেদার শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে আটক অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তার এই রোহিঙ্গা যুবকদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৮৬৮ রাউন্ড গুলি, পিস্তলের ২৪ টি খালি খোসাসহ রাইফেল গ্রেনেট ফিউজ ৫ রাউন্ড, এসএমজির ম্যাগজিন ৬টি, এলএমজির ম্যাগজিন ৪টি, জি-৩ রাইফেলের ম্যাগজিন ১টি ও পিস্তলের ম্যাগজিন ২টি। এই অস্ত্রগুলো তারা কোথায় পেয়েছে সেটাও অনুসন্ধান চলছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শামীম হোসাইন বলেন, শনিবার এই ২৩ জনকে আমরা আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছি। আদালতে এখনও শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের রিমান্ড হলে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব।
আবারো আলোচনায় নবী হোসেন : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে বাংলাদেশে ইয়াবার ব্যবসা করেন নবী হোসেন। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সাবেক এই সদস্যের সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সখ্যতার কথা জানা যায়। রাখাইনে তার শতাধিক চিংড়ি ঘের রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ইয়াবার কারখানাও। রাখাইনে যখন সংঘাত চলছে, তখন নবী হোসেন কোথায়? খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নবী হোসেন এখনও রাখাইনেই আছে। তার যে ক্যাডার বাহিনী ছিল, তারাও রাখাইনেই আছে। কেউ এখনো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেনি। তবে নবী হোসেন ভোল্ট পাল্টে এখন আরাকান আর্মির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে সেখানে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন। পাশাপাশি ইয়াবা ব্যবসাও চলছে।
জানা গেছে, সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সতর্ক পাহাড়া দিলেও এর মধ্য দিয়েও ইয়াবা আসছে। পাঠাচ্ছেন সেই নবী হোসেন। এই নবী হোসেন বিরুদ্ধে বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়া থানায় হত্যাসহ এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। তার ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।