spot_img

জাবিতে ধর্ষণকাÐ: নিপীড়ন বিরোধী সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ও সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সংহতি সমাবেশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার বিকালে বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবহন চত্ত¡রে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের’ ব্যানারে এ সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং র‌্যাগিং সংস্কৃতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে; নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তি করাসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে; নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে, জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণাপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সমাবেশে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন দানবের বিরুদ্ধে মানবের আন্দোলন। ধর্ষক মোস্তাফিজ শুধু একজন ব্যক্তি নয়, তার পক্ষে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে একটা মহল। এ মহলের সাথে যুক্ত আছে ক্ষমতা, প্রশাসন ও নির্দিষ্ট গোষ্ঠী। আমাদের ন্যায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দানবের বিরুদ্ধে জিততে হবে।’
প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞাণ বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হয়েছে তারা ধর্ষক, নিপীড়ক ও মাদকাসক্ত হয়ে ভর্তি হয়নি। কিন্তু তাহলে তারা কেন ধর্ষক, নিপীড়ক হয়েছে? এ দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াতে পারে না। স¤প্রতি যে সংকটগুলো হয়েছে এতে যদি প্রশাসন সক্রিয় থাকতো, বিচারের আওতায় আনতো; তাহলে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটতো না। প্রশাসনের বিচারহীনতা শিক্ষার্থীদের অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘মাদক ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে উদাসীনতা প্রমাণিত হলো। বিশ্ববিদ্যালয় মাদকে সয়লাব অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন টাকা পয়সা ভাগ-বাঁটোয়ারা করতে ব্যস্ত। হল প্রশাসন অছাত্রদের বের করার নামে নন-এলোটেড শিক্ষার্থী ও যাদের রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততা নেই, তাদের বের করার চেষ্টা চালচ্ছে। তারা আমাদের চোখে ধুলো দিচ্ছে।’
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কারা সিট বাণিজ্য করছে, তাদের খুঁজে বের করে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু সময় ঠিকই ফুরিয়ে যাচ্ছে অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন টালবাহানা শুরু করেছে।’
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ধর্ষক মোস্তাফিজ ও তাকে ধর্ষণে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা। ১৯৯৮ সালে দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিল ‘ক্যাডাররা ধর্ষণ করেছে তিন ছাত্রীকে’। ওই ঘটনায় জড়িতরা ছিলেন ছাত্রলীগের ক্যাডার। এবারো ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান জড়িত। সময় পাল্টেছে কিন্তু শিরোনাম পাল্টায়নি। যারা ধর্ষণ ও ধর্ষণের সহযোগিতা করেছে তাদের চরিত্র পাল্টায়নি।’ এ সময় তিনি আজ রবিবার সন্ধ্যায় নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে মশাল মিছিল কর্মসূচি পালিত হবে বলে ঘোষণা দেন।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাবেক সভাপতি মাহি মাহফুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাথী মজুমদার ও সামি আল-জাহিদ প্রিতম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন প্রিন্স ও সুস্মিতা মরিয়ম প্রমুখ।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ