আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, বিএনপির কালো পতাকা মিছিল অবৈধ। পুলিশের অনুমতি নেয়নি সেটাও অনিয়ম। অনুমতি না নিয়ে রাজপথে ফ্রিস্টাইল কর্মস‚চি সরকার মেনে নেবে না। গতকাল বুধবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
দ্বাদশ সংসদের অধিবেশন শুরুর দিন বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের স্পিকারকে ধন্যবাদ দিতে দাঁড়িয়ে যেভাবে সংসদের ‘ভারসাম্য’ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংসদ ভারসাম্যপ‚র্ণ না হলে তিনি কেন এলেন, আবার তিনি সংসদে যা বলার একাই বললেন।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, জতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান যেভাবে ওই বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা নিয়মের লঙ্ঘন। মঙ্গলবার কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কথা বলেননি, আমি আনুষ্ঠানিকতা একটু বলেছি। যা বলার তো জিএম কাদেরই বলেছেন। উনি স্পিকারকে ধন্যবাদ দেওয়ার নামে সংসদে ফ্লোর নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা বলা তার উচিত হয়নি।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্পিকারকে ধন্যবাদ দেওয়ার নামে শুরুতেই উনি ফ্লোর নিয়ে যে কথা বললেন, মনে হল যে তুলকালাম হয়েছে, লম্বা একটা বক্তব্য দিলেন। বিষয়টা ছিল ধন্যবাদ জানানো, উনাকে লম্বা বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সামনে তার কথা বলার যথেষ্ট সুযোগ আছে। সংসদে আপনি আসলেন এবং নেতা নির্বাচিত হয়েই আসলেন। কেউ নেতা, কেউ উপনেতা-আনুষ্ঠানিকতা মেনেই তো সংসদে আসলেন।’ জাপাকে নিয়ে কটাক্ষ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এদেশে একজন শুধু বিরোধীদলের নেতা ছিলেন, এখন নেতা, উপনেতা। এখন তো তারা এগারো জন, সেটা ফুটবল টিম বা ক্রিকেট টিম, যাই হোক, আর এভাবে বলা ঠিক হবে না।’
সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সংসদে আসন সংখ্যার অনুপাতে আওয়ামী লীগ ৩৮টি সংরক্ষিত নারী আসন পাবে। আর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সবাই মিলে ৪৭ বা ৪৮টি আসন পাবে। আমরা সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নে পরীক্ষিত ত্যাগীদের গুরুত্ব দেব। সংরক্ষিত আসন পঞ্চাশের মধ্যে আমাদের সদস্য সংখ্যার সঙ্গে স্বতন্ত্রদের পক্ষ থেকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে মনোনয়ন চাওয়া ও ফরম নেওয়ার যে হিড়িক, সেই তুলনায় দেওয়ার সংখ্যা তো খুবই কম। পরীক্ষিত ত্যাগীদের গুরুত্ব দেব। যারা দুঃসময়ের পরীক্ষিত বন্ধু তাদের ব্যাপারটা অগ্রাধিকার দেব।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেউ ত্রæটিপ‚র্ণ বলেনি। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নয়। নির্বাচনের ফলাফলের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদ‚ত পিটার হাস প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সর্বশেষ সংসদ অধিবেশনে মার্কিন রাষ্ট্রদ‚ত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। সংসদের প্রথম অধিবেশনেও যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করি। এর মানে কী দাঁড়ায়? আমাদের নির্বাচন ত্রটিপ‚র্ণ বলেনি। সবাই একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। কোনো দেশের গণতন্ত্র ত্রæটিমুক্ত নয়। আমরাও সম্প‚র্ণভাবে ত্রæটিমুক্তি নই। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সড়ক ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার শুধু কথা নয়, কাজও করে যাচ্ছে, অ্যাকশনে আছে। সরকার দ্রব্যম‚ল্য নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে দিয়েছেন। সে অনুসারে কাজ শুরু করে দিয়েছে। রাতারাতি নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে না। সরকার শুধু কথা বলছে এমন নয়। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা আইন ভঙ্গ করবে তারা যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে এটা ভুল করেছেন। এখন কালো পতাকা মিছিল করছেন। কালো পতাকার প্রশ্ন কেন আসবে? তাদের কালো পতাকা, কালো ব্যাজের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই। পুলিশকে অমান্য করে তাদের দম্ভোক্তি শুনেছি- ‘আমরা আর অনুমতি নেব না’। অনুমতি না নিয়ে রাজপথে ফ্রি স্টাইলে করবে, আর আমরা চুপচাপ বসে থাকব, এটা হবে না। অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, এসএম কামাল হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজি, মারুফা আক্তার পপি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।