spot_img

দুর্নীতির ধারণা সূচকে দুইধাপ পেছাল বাংলাদেশ ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৯

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচকে গত এক বছরে বাংলাদেশে দুর্নীতি পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তাদের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের দুই ধাপ অবনমন ঘটেছে। টিআই-এর দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদন ২০২৩ -এ ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৯ নম্বরে। গতবার এ তালিকায় বাংলাদেশ ১৪৭ নম্বরে ছিল। আবার অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) বিবেচনা করলে বাংলাদেশ অবস্থান এবার ১৮০ দেশের মধ্যে ১০তম, যেখানে গতবছর ছিল ১২তম অবস্থানে। এতে দেখা গেছে, ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৪, যা গতবারের চেয়ে এক পয়েন্ট কম। গত বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৫। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে বার্লিনের সঙ্গে একযোগে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।


সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশের নি¤œ অবস্থানের ব্যাখ্যা তুলে ধরে বলেন, গত কয়েক বছর সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঘোষিত “দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা”র সবচেয়ে আলোচিত মেয়াদ ছিল। কিন্তু এই মেয়াদে এই ঘোষণাকে চর্চায় রূপ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট কৌশল-নির্ভর কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি; উপরন্তু এই মেয়াদে দুর্নীতির ব্যপকতা ঘনীভ‚ত ও বিস্তৃত হয়েছে। সরকারি ক্রয় ও বিতরণ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে দুর্নীতির অসংখ্য তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এই সময়কালে বিদেশে অর্থ পাচারের আশঙ্কাজনক চিত্র উঠে আসলেও এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ঋণখেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থপাচারে জর্জরিত ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং এর জন্য যারা দায়ী, তাদের জন্য বিচারহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমনে কার্যকর দৃষ্টান্ত শাস্তি নিশ্চিতে কার্যকরতা দেখাতে পারেনি। রাজনৈতিক, প্রসাশনিক ও আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে অর্জিত ক্ষমতার অবস্থানকে অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিকতায় রূপান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব ব্যাপকতর হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানায়, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২৩-এ বাংলাদেশের স্কোর ২০২২ এর তুলনায় ০-১০০ স্কেলে এক পয়েন্ট কমে ২৪ এবং নি¤œক্রম ও ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী অবস্থানের দুই ধাপ অবনতি হয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে যথাক্রমে ১০ম ও ১৪৯তম। স্কোর ও অবস্থানের এই অবনমন প্রমাণ করে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ঘোষণাসহ সরকারের বিভিন্ন অঙ্গীকার সূচকের তথ্যের সময়কালে (নভেম্বর ২০২০-সেপ্টেম্বর ২০২৩) বাস্তবিক অর্থে কোনো কার্যকর প্রয়োগ হয়নি। বরং আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের আরও অবনতি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৩ সালের সিপিআই অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯০ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। ৮৭ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ফিনল্যান্ড এবং ৮৫ স্কোর পেয়ে তৃতীয় স্থানে নিউজিল্যান্ড। আর ১১ স্কোর পেয়ে ২০২৩ সালে তালিকার সর্বনি¤েœ অবস্থান করছে সোমালিয়া। ১৩ স্কোর পেয়ে নি¤œক্রম অনুযায়ী যৌথভাবে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ভেনেজুয়েলা এবং ১৬ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনি¤œ অবস্থানে রয়েছে ইয়েমেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সিপিআইয়ে অন্তর্ভুক্ত ১৮০টির মধ্যে ১০৫টি দেশ বৈশ্বিক গড় ৪৩ এর কম স্কোর করেছে। অর্থাৎ বিশ্বের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীই গড় স্কোর ৪৩ এর চেয়ে কম পেয়ে সূচকের শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী অতীব উদ্বেগজনক দুর্নীতির মধ্যে বাস করছে। আর সূচকে অন্তর্ভূক্ত দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ১২২টি দেশের স্কোর ৫০ এর নিচে, যার অর্থ এসব দেশে দুর্নীতির মাত্রা উদ্বেগজনক।
২০২৩ সালের সিপিআই অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে ভুটান গত বছরের ৬৮ স্কোর ধরে রাখলেও এ অঞ্চলের পাঁচটি দেশ এবার ২০২২ এর তুলনায় কম স্কোর করেছে। আর অবশিষ্ট দুটি দেশের স্কোর কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে আফগানিস্তানের চার পয়েন্ট, শ্রীলঙ্কার দুই পয়েন্ট এবং বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও ভারতের স্কোর এক পয়েন্ট করে কমেছে। আর পাকিস্তানের দুই পয়েন্ট ও নেপালের এক পয়েন্ট স্কোর বেড়েছে। তবে, দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভুটান ছাড়া বাকি সাতটি দেশই সূচকের গড় স্কোর ৪৩ এর কম পেয়েছে। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার জনসাধারণ সার্বিকভাবে অতীব উদ্বেগজনক দুর্নীতির মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
এর প্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে ৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো হলো, ১. কার্যকরভাবে সব ধরনের দুর্নীতির অপরাধের শাস্তি এবং মতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে ক্ষমতাবানদের দুর্নীতির প্রকাশ করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা। ২. পেশাগত সততা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অরাজনৈতিককরণ এবং স্বাধীনতা দেয়া বিশেষ করে দুদক, আমলাতন্ত্র, আইন প্রয়োগকারী এবং বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা। ৩. জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণগুলোকে বিশেষ করে বিচার বিভাগ, ব্যাংকিং, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্বাস্থ্য শিা, জমি এবং অবকাঠামো প্রকল্প প্রতিষ্টান রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত রাখা। ৪. গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং বৃহত্তর জনগণের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ৫. রাজনৈতিক আচরণ থেকে মুক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি দৃষ্টান্ত পরিবর্তন আনা যা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত লাভের লাইসেন্স হিসাবে ব্যবহার করা হয় তা পরিবর্তন করা।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ